পতাকার ফেরিওয়ালা মোজাহিদ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ইং, ৬:৫৪ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ১৮৫৪ বার পঠিত
অসিত রঞ্জন দেব, মো.জামাল মিয়া:: মোজাহিদ আলী (১৩)। বাড়ি ব্রাক্ষনবাড়িয়া জেলার মজলিসপুর থানার মন্ডলহাজি বাড়ি গ্রামে। বর্তমানে সে সিলেট শহরের পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে আসছে। পিতার নাম কামাল উদ্দিন। জন্ম দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ৩২ বছর পরে। পেশায় তিনি একজন দিনমজুর। কিন্তু বিজয়ের মাসে নতুন স্বপ্ন দেখে মোজাহিদ আলী। তাই এই মাসে দিনমজুরের কাজ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত জাতীয় পতাকা হাতে। এ পতাকা তুলে দেন স্বাধীন দেশের নতুন প্রজন্মের হাতে হাতে। বছরের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও ডিসেম্বর মাসে ফেরি করে জাতীয় পতাকা বিক্রি করা তার পেশা। সারাদিন পায়ে হেটে শহর ও উপজেলা এলাকায় পতাকা বিক্রি করে সে।
মঙ্গলবার সকালে বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের বাসিয়া ব্রীজের সামনে পতাকা হাতে ডেইলি বিশ্বনাথ ডটকম’র দুইজন নিজস্ব সংবাদদাতাদের সঙ্গে কথা হলে সে জানায়, গত এক বছর ধরে এ পেশায় সে জড়িত। পেশায় একজন দিনমজুর। বর্তমানে দিনমজুরের কাজ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। গত বছর ধরে সে ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও ডিসেম্বর মাসে পতাকা বিক্রির করে আসছে। সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা শহরে পতাকা বিক্রি করে থাকে। এ বছরও ১ ডিসেম্বর থেকে পতাকা বিক্রি শুরু করেছেন এবং তা চলবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
সংসারে ছয়জনের খাবারের খরচও তার উপার্জন করতে হয়। এ কারণে জীবনের ঝুকি নিয়ে পতাকা হাতে তার বিশ্বনাথে আসা। আর এ পতাকার অধিকাংশ নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়ে ও গাড়িতে বিক্রি করে উপার্জিত টাকা নিয়ে বাসায় ফিরে যাবে। আর সেই টাকা সংসারে খরচ করবে বলে জানায় মোজাহিদ আলী।
তার কাছে সাত রকমের পতাকা রয়েছে। এগুলো হলো স্টিকার, লাঠি পতাকা, মাথার ফিতা, জিরো পতাকা, ২ ফুট, সাড়ে তিন ফুট এবং ৫ ফুট পতাকা। পতাকার সাইজ অনুসারে এর ক্রেতাও আছে বলে জানায় সে। স্টিকার বিক্রি করেন ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের কাছে। লাঠি পতাকা বিক্রি করেন রিকসা ও সাইকেল চালকদের কাছে। জিরো পতাকা বিক্রি করেন মোটরসাইকেল এবং ছোট যানবাহনের চালকদের কাছে। মাথার ফিতা কেনেন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন সাইজের পতাকা বিক্রি করে বলে সে জানায়। ব্যবসায় তার লাভ যাই হোক এই অর্জনকে সে বড় করে দেখছে।
মোজাহিদ আলী জানান, প্রাণের পতাকা কাঁদে নিয়ে সিলেট শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে বাড়ি ফিরে যাবেন। ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে সে আবার তার আগের কাজে নেমে পড়বে। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতার মাস মার্চ আসলে বেরিয়ে পড়বে পতাকা হাতে পথে প্রান্তরে।