বিশ্বনাথে পলো বাওয়া উৎসব পালিত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ইং, ৪:২৬ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ৩৫০ বার পঠিত
অসিত রঞ্জন দেব, জামাল মিয়া :: সিলেটের বিশ্বনাথে বিপুল উৎসাহ-উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসব পালিত হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের দক্ষিণের (বড়) বিলে ওই পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহন করেন গ্রামের কয়েক তিন শতাধিক মানুষ। সৌখিন শিকারীরা পলো দিয়ে মাছ ধরেছেন অনেকেই মাছের মধ্যে ছিল বোয়াল, শউল, মিরকা, কারপু, বাউশ, ঘনিয়া, রউ’সহ বিভিন্ন জাতের মাছ।
গোয়াহরি গ্রামের ঐহিত্য অনুযায়ী প্রতি বছরের মাঘ মাসের পহেলা তারিখ এই পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। পলো বাওয়া উৎসবকে কেন্দ্র করে গোয়াহরি গ্রামে গত কয়েকদিন ধরে উৎসবের আমেজ রিবাজ করছিল। পলো বাওয়া এই উৎসবে অংশ নিতে শনিবার সকাল ৯টা থেকে গোয়াহরি গ্রামের সৌখিন মানুষ বিলের পারে এসে জমায়েত হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিলের পারে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। পূর্ব নির্ধারিত সময় দুপুর ১০টায় সবাই এক সঙ্গে বিলে নেমে শুরু করেন পলো বাওয়া। শুরু হয় ঝপ ঝপ পলো বাওয়া। প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী এ পলো বাওয়া উৎসবে গোয়াহরি গ্রামের সব বয়সি পুরুষ অংশ নেন।
সরেজমিনে গোয়াহরি বিলে গিয়ে দেখা যায়, মাছ শিকার করতে নিজ নিজ পলো নিয়ে বিলের ওপর ঝাপিয়ে পড়েন লোকজন। যাদের পলো নেই তারা মাছ ধরার ছোট ছোট বিভিন্ন জাল নিয়ে মাছ শিখারে ব্যস্ত সময় কাটান। এসময় মাছ ধরার এ দৃশ্যটি উপভোগ করতে বিলের পারে ছোট ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের পুরুষ-মহিলা, দূর থেকে আসা অনেকের আত্বীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ছেলে বুড়ো মিলিয়ে প্রায় তিন শতাধিক লোক পলো বাওয়া উৎসবে অংশগ্রহন করেন। তবে পলো বাওয়া উৎসবের আনন্দটা যুবক-বৃদ্ধের চেয়ে ছোট ছোট শিশুদের মাঝেই একটু বেশি আনন্দের মনে হয়েছে। তারা তাদের বাবা-চাচা-দাদা-মামা-ভাইর হাত ধরে কইল নিয়ে এসেছে মাছ ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। পলো বাওয়া উৎসবে কোন একজন একটি মাছ ধরার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্যরা আনন্দ মনে চিৎকার করে উঠেন। ছোট-বড় কোন ভেদাভেদ না করে সবাই মিলে পূর্ব পুরুষদের মত প্রায় দুই শত বছর ধরে এই পলো বাওয়া উৎসবে যোগ দেন গোয়াহরি গ্রামের শতশত মানুষজন। তবে এই পলো বাওয়া দেখতে আশপাশের গ্রামের লোকজন সকাল থেকেই ছোট ছোট দল বেঁধে আসতে থাকেন গোয়াহরি বড় বিলে। সংবাদ সংগ্রহের জন্য স্থানীয় সংবাদকর্মীরাও ছুটে যান বিলে। সবাই মাছ পেয়ে সবার মনে আনন্দের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
এব্যাপারে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছাদিক হোসাইন বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহি পলো বাওয়া উৎসব প্রতি বছর উৎসবের মত পালন করা হয়। এতে সব বয়সি মানুষ উৎসবে অংশ গ্রহন করেন। তিনি বলেন, পলো বাওয়া উৎসবে অনেক প্রবাসী সৌখিন মানুষেরা প্রবাস থেকে আসেন।
দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গোলাম হোসেন বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষের পলো বাওয়া উৎসব পালন করতেন। তাদের ধারাবাহিকতা এখন চলছে পলো বাওয়া উৎসব। এধারা অব্যাহত রাখতে গ্রামবাসি সব সময় পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজন করে থাকেন।