বইমেলা : বুদ্ধিবৃত্তিক খোলা বাতাস
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ইং, ৩:০৬ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ১২৬৭ বার পঠিত
বইমেলাকে আমরা প্রাণের মেলা বলি। প্রাণের টানেই আমরা ছুটে যাই বইমেলায়। পাঠক লেখক আর প্রকাশকদের প্রত্যাশা প্রাপ্তি এবং ভালোবাসায় পরিপূর্ণ থাকে ভাষার মাস। বইমেলা নিয়ে অনুভূতি এবং আশার কথা বলেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় কবি সাহিত্যিকেরা। তাদের কাথাই তুলে ধরছেনÑ শামিল আরাফাত
এখানে সবাই একবার যেতে চায়
বাংলাদেশের প্রধানতম কবি আল মাহমুদ বলেন, বইমেলাই একমাত্র মেলা যেখানে এদেশের বুদ্ধিজীবী, যারা শিল্পসাহিত্য পছন্দ করেন তাদের জন্য আনন্দের মেলা। এখানে সবাই অন্তত একবার যেতে চায়। আমরা তো চিরকাল উৎসাহ দিয়ে এসেছি বইমেলার ব্যপারে। বলে এসেছি বইমেলাটা নিরুপদ্রপ শান্তিপূর্ণ সবসময় থাকুক। দেশে যাই হোক বা না হোক, বইমেলায় যেতে মানুষের যেন কোনো অসুবিধার সৃষ্টি না হয়। বইমেলাটা যেন সবাই দেখতে পারে ঘুরতে পারে। বই হাতাতে পারে। এটাই আমি চাই।
বইমেলা দেশের শিল্পসাহিত্যের একটা প্রদর্শনী। একটা প্রদর্শনীর স্থান। এখানে সবাই বই ঘাটতে পারবে দেখেতে পারবে। বই নিয়েই সব কারবার। বইমেলা হলো সত্যিকার অর্থে আমার প্রাণের মেলা। আমাদের জীবনের খুশির আনন্দের মেলা। আমার ওখানে একটু ঘুরতে পারলে মনে আনন্দ লাগে। খুশি লাগে। ওখানে গিয়ে এক কাপ কফি খেলাম বা এক কাপ চা খেলাম। আড্ডা মারলাম বন্ধুদের নিয়ে একটুখানি। এটা মন চায়।
বইমেলার দিকে তাকিয়ে থাকি
আমাদের বইমেলা এবং অন্যান্য দেশের বইমেলার তুলনা করে সাহিত্যিক হায়াৎ মামুদ বলেন, বাংলাদেশে আমরা যারা কিঞ্চিৎ লেখাপড়া জানি, এবং বই পড়ার যাদের অভ্যেস আছে তারা তো বইমেলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। বইমেলা সব দেশেই হয়। কিন্তু আমার জানা মতে কোথাও একমাস ধরে হয় না। যেমন পশ্চিমবঙ্গে হয়, নাসিরপুর আগরতলায় হয়। কিন্তু একমাস কোথাও হয় না। আমাদের বইমেলাটা যে এক মাস হয় এখানে বাইরের বই আসে না। এটা আন্তর্জাতিক নয়। এটা একেবারেই আমাদের ঘরোয়া বইমেলা। আমরা যারা বই পড়তে ভালোবাসি বা যারা পড়তে চায় করতে চায় তারা এই মেলার দিকে তাকিয়ে থাকে। মানুষের কাজের ব্যস্ততা খুব বেশি। সময় কম। দোকানে দোকানে গিয়ে বই খোঁজার চেয়ে এই বইমেলায় একসঙ্গে এত দোকান এত বই এখান থেকে নিজের পছন্দমতো বই কিনে নিতে পারে। দুপুরের দিকে ভিড় বেশি হয় না। এই সময় বই কিনতে খুব সুবিধা।
বইমেলাটা আসলে একটা সম্মিলন ক্ষেত্র। এখানে কিছু লোক বই কিনবে, আর বেশির ভাগ লোক বন্ধুবান্ধবের সাথে দেখা হবে গল্প করবে আনন্দ বিনিময় করবে। এটা হলো একটা মিলন ক্ষেত্র। আমরা সবই বইমেলাটার দিকে তাকিয়ে আছি।
বইমেলাকে আন্তর্জাতিক করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক করতে গেলেই বইমেলাটা নষ্ট হবে। এটাকে এরকমই রাখতে হবে। আর এটা করারও উপায় নেই। যে নীতির ওপর এই মেলাটা হয়েছে তাতে বাইরের বই বিক্রি হবে না।
আমাদের এখানে ইংরেজি পড়ার লোকজন কমে গেছে। ইংরেজি বইপত্রও খুব বেশি পাওয়া যায় না। ফলে এইরকম একটি বড় দোকান যদি থাকত যেখানে বাইরের বইপত্রও বিক্রি হচ্ছে। তাহলে আমরা যারা একটু পড়াশোনা করি আমরা যারা পড়াই তাদের খুব সুবিধা হতো।
বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ দরকার
শিল্প সাহিত্য সমাজ এবং জীবনের কথা বলে। সমাজের পরিবেশ পরিস্থিতি সবকিছুই সাহিত্যের সাথে জড়িত। আমাদের ভাষা ও সাহিত্যের প্রদর্শন হয় বইমেলায়। বইমেলা প্রসঙ্গে কথাশিল্পী জুবাইদা গুলশান আরা বলেন, মেলা নিয়ে প্রত্যেক বছরই আমাদের অনেক প্রত্যাশা থাকে। এটা অনেক দিন ধরে আস্তে আস্তে গড়ে উঠেছে। আমার মনে হয় মেলার পরিবেশ আর একটু ভালো হবে যদি চার দিকে গোলমাল গণ্ডগোল থেকে আমরা দূরে সরে আসতে পারি।
জাঁকজমকটা বড় কথা না, মেলার পরিচ্ছন্নতাটা বড় কথা। আর আনন্দ উল্লাসের চেয়ে বড় কথা হলো এখানে বুদ্ধিবৃত্তিক একটা বিকাশ দরকার। সবাই মনে করে এখানে এলে একটু দম নিতে পারবে। একটু খোলা বাতাস পাবে। বুদ্ধিবৃত্তিক খোলা বাতাস।
পাঠকদেরও অনেক আশা। সারা বছর তারা চেয়ে থাকে এই মাসটার দিকে। পাঠকদের জন্যই আমরা লেখালেখি করি। পাঠকদের যে ভালোবাসা সেটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় কথা। তাছাড়া এ বছর আমাদের অনেক বুদ্ধিজীবী, লেখক মারা গেছেন। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। তাদেরকে সম্মান জানিয়ে এবারের বইমেলাটা আমরা উদযাপন করব।
দেশের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও বইমেলা নিয়ে মানুষের উচ্ছ্বাস আমদের মোহিত করে। মেলার পরিবেশও আগের থেকে অনেক পরিচ্ছন্ন, প্রশারিত এবং সুন্দর হয়েছে। অস্থায়ী বেঞ্চিগুলোতে বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন কেউ কেউ। স্টলের আকার বড় হওয়াতে প্রকাশকরাও আছেন ফুরফুরে মেজাজে। এবছর বইমেলায় সম্ভাবনাময় অনেক তরুণ কবির প্রথম বই প্রকাশিত হওয়ায় এটি একটি বাড়তি আকর্ষণ হয়েই থাকবে। প্রতিবছরের মতো এবারও বইমেলার বুলেটিন বের করছেন অনেকেই। বিতরণ করছেন পাঠকের হাতে হাতে। সার্বিক ভাবে বলা যায় বইমেলায় এসে মানুষ একটু প্রশান্তি খুঁজে পাবেন নিঃসন্দেহে।–