বিলুপ্তির পথে বিশ্বনাথে বাঁশের তৈরি মই
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ইং, ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ | সংবাদটি ১৮৬৯ বার পঠিত
জামাল মিয়া,বিশ্বনাথ ::কৃষিপ্রধান আমাদের দেশে এক সময় ক্ষেতে-খামারে কৃষকের লাঙ্গল ও মই দিয়ে চাষাবাদের দৃশ্য ছিল একটি নিত্য সাধারণ বিষয়। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে ন। চাষাবাদে বহুল ব্যবহৃত বাঁশের তৈরি মই আজ বিলুপ্তির পথে।
বিশ্বনাথ উপজেলায় হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহি চাষাবাদের অন্যতম উপকরণ হিসেবে মই ছিল অপরিহার্য। একসময় মই ছাড়া গ্রামে গ্রামে চাষাবাদের কথা চিন্তাই করা যেত না। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক যুগে পর্দাপন করে চাষাবাদের যান্ত্রিক সব উপকরণ আবিষ্কারের প্রভাবে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে কৃষি কাজে ব্যবহৃত ওইসব লাঙ্গল,জোয়াল, মই ও হালের বলদ। এসবের ব্যবহার স্বল্প আয়ের কিছু সংখ্যক কৃষক পরিবারে কোনো রকমে টিকে থাকলেও সমাজের মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্তরা এখন আধুনিক পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, প্রভৃতি ব্যবহারেই বেশি আগ্রহী।
কৃষকদের ভাষ্য হচ্ছে, বর্তমানে সময় ও শ্রমের সাশ্রয় করতে আধুনিক যন্ত্রপাতির দিকেই বেশি মনোযোগী না হয়ে উপায় নেই। আর সেজন্যই ক্রমেই হারিয়ে যাওয়ার পথে আমাদের ঐতিহ্যবাহী মই।
তবে এখনও গ্রাম-গঞ্চের অনেকেই কৃষি মৌসমে গ্রাম্য হাটবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে চাষাবাদের পুরনো দিনের কালের সাক্ষী লাঙ্গল, জোয়াল, মই ইত্যাদি সরঞ্জামের পসরা সাজিয়ে বসেন। তবে যারা এগুলোকে পেশা হিসেবে নিয়ে তৈরি করছেন, তাদের অনেককেই এজন্য বেশির ভাগ সময় বেকার বসে থাকতে হচ্ছে। কেননা এগুলোর চাহিদা মৌসুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
একসময় মই তৈরী করেই জীবিকা চলতো গ্রামীণ জীবনের অসংখ্য মানুষের। এটি ছিল কারও কারও পেশা। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আধুনিক যন্ত্রপাতির দাপটে তাদের অনেকেই সেই পেশা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ফলে একদিকে কমেছে বাঁশের তৈরী মইয়ের ব্যবহার, অন্যদিকে কমেছে মই তৈরীর সংখ্যাও। যার ফলে সেই বাশেঁর তৈরি মই যেন আজ ঐতিহ্য বহন করা আর স্মৃতি জাগানিয়া শুধুই কালের সাক্ষী।
তবে উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় এখনো কৃষকদেরকে মই দিয়ে চাষাবাদ করতে দেখা যায়। তাদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, আধুনিক যন্ত্রপাতি তাদের পক্ষে কেনা সম্ভবপর না হওয়ায় তারা সেই আদি মই-লাঙ্গল ব্যবহার করছেন। তবে মই দিয়ে খুব কম কৃষক চাষাবাদ করছেন জানিয়ে তারা বলেন, উপজেলার বেশির ভাগ কৃষক আধুনিক যন্ত্র পাওয়ার টিলার কিংবা ট্রাক্টর দিয়ে চাষাবাদ করে আসছেন। যার ফলে কাঠের লাঙ্গল, জোয়াল, মই ও হালের বলদ বিলুপ্তির পথে রয়েছে।
উপজেলার কারিকোনা গ্রামের কৃষক রইছ আলী বলেন, বাশেঁর তৈরি মই এখন আর আগের মত ব্যবহার করা হচ্ছে না। কারন বর্তমানে পাওয়ার টিলার কিংবা ট্রাক্টর দিয়ে জমিতে চাষাবাদ করা হয়। ফলে এর চাহিদাও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।
অপর কৃষক জহুর আলী বলেন, আগে যেখানে জমিতে চাষাবাদের জন্য হালের বলদ, লাঙ্গল ও মই ক্রয় করত হতে, এখন এসব কিছুই লাগে না। আধুনিক যন্ত্র দিয়েই চাষাবাদ করা হচ্ছে। যার ফলে বিলুপ্তির পথে রয়েছে আগেকার চাষাবাদের গ্রাম বাংলার পুরোনো লাঙ্গল, জোয়াল ও মই।