বিশ্বনাথে অযতেœ পড়ে আছে প্রবাসীদের আলিশান বাড়ী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ইং, ৬:২১ পূর্বাহ্ণ | সংবাদটি ৯০০ বার পঠিত
আব্দুল মজিদ :: “লোকে বলে, বলেরে ঘরবাড়ী বালানায় আমার” মরমী কবি হাছন রাজার লেখা গানের বাস্তবতা এখন আর বিশ্বনাথে নেই। প্রবাসীদের কল্যানে এ উপজেলায় নির্মিত হয়েছে বড় বড় অট্টালিকা। কিন্তু অযতেœ অবহেলায় পড়ে আছে প্রবাসীদের সেই আলিশান বাড়ী গুলো। নিজেরা কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব বাড়ীতে বসবাসের সুযোগ না পেলেও সবার চাই সুন্দর একটি বিলাশ বহুল বাড়ী। এতে করে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা হচ্ছে জব্দ। হচ্ছেনা কোন কলকারখানা।
‘‘পরের জায়গা পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই। আমিতো সেই ঘরের মালিক নই’’ গানের মত প্রবাসীদের আলিশান বাড়ীগুলো পাহাড়াদেন ২/১ জন পরদেশী ব্যক্তি। অনেক বাড়ীতেই নিরব রাতে কান পাতলে শুনা যায় পরদেশীদের কন্ঠে তাইতো নিজেদের অজান্তেই গুন গুনিয়ে গাইতে থাকেন এ গানটি। এই পরদেশী হচ্ছে অন্যজেলার লোক। যারা দীর্ঘ দিন ধরে সিলেটের অন্যান্য উপজেলার মত বিশ্বনাথেও বসবাস করছেন। আশ্চর্য্য হলেও সত্য বিশ্বনাথে এখন কোটি কোটি টাকায় নির্মিত বাড়ীঘর ফাঁকা অবস্থায় পড়ে আছে। বাড়ীতে থাকার মত লোকও দেশে নেই। সবাই প্রবাসে। ৩/৪ বছরে দুয়েকবার আসেন আবার চলে যান। কিন্তু রেখে যান লক্ষ লক্ষ টাকার মূল্যবান মালামাল। রক্ষানাবেক্ষনের অভাবে নষ্ট হচ্ছে অধিকাংশ জিনিসপত্র। প্রবাসীদের বাড়ীতে আছে সর্বাধুনিক মডেলের ফার্নিচার, ইলেক্টনিক্স জিনিসপত্র, ঘরের ব্যবহার্য আসবাপত্র, কম্পিউটার, আছে ডিস লাইন, ইন্টারনেটের ব্যবস্থা, আছে ব্যক্তিগত জিম সেন্টার, সুইমিংপুল, আছে মিনি পার্ক, আর কি চাই বলুন। হে তারপরও আছে লেইটেষ্ট মডেলের জিপ, কার, মটর সাইকেল। শুধু নেই বাড়ীতে থাকার মত মানুষ। আত্বীয়-স্বজন যারা আছেন তাদের ঘরেও থাকার মানুষ নেই। আর তাই ঘর প্রহরার জন্য রাখতে হচ্ছে অন্য জেলার লোকদের। যেন প্রবাসীদের বাড়ীতে পরদেশীদের বসবাস। ইদানিং কালে খবর বেশ ভাল না। ফাঁকা বাড়ীতে ঘটছে নানান ধরনের অপকর্ম-অবৈধ ব্যবসা বানিজ্য, ঘটছে চুরি-ডাকাতির মত ঘটনা। যে কারণ প্রবাসে গিয়েও শান্তিতে নেই এলাকার প্রবাসীরা।
প্রবাসীরা দেশে আসার পর কতদিন দেশে আছেন জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে তারা বলেন- দেশে থাকতে মন চায় কিন্তু দেশের যে অবস্থা থাকতে মন চায় না। তাছাড়া লন্ডনের ব্যবসা-বানিজ্য, চাকুরী, ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার অসুবিধার কথা বলেন। প্রবাসীদের অনেকেই বলেন দেশে আসি বাপ-দাদার ভীটে-বাড়ী, স্বহায়- সম্পত্তি, আতœীয়-স্বজনকে দেখার জন্য। যদিও অনেকে আসেন নিজ সম্পত্তি রক্ষার জন্য কিংবা বেহাত হওয়া সম্পত্তি উদ্ধার করতে। তারপরও এত বিশাল আলিশান বাড়ী নির্মান করলেন কেন? এর উত্তরে বলেন-পারিবারিক ঐতিহ্য আর নিজের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য। মন চায় আরো কিছু করি কিন্তু চতুরদিকে বাঁধা আর বাঁধা। তারপরও গরীব অসহায় মানুষের সাহায্য সহযোগীতায় এগিয়ে আসার চেষ্টা করি।
শিল্প কারখানা স্থাপন, ব্যবসা বানিজ্য না করার কারন জানতে চাইলে প্রবাসীরা বলেন- একেবারে যে হচ্ছেনা তা কিন্তু নয়। সমস্ত সিলেট জুড়ে যে আলিশান প্রাসাদ নির্মিত হচ্ছে, বড় বড় মার্কেট নির্মিত হচ্ছে, মার্কেটগুলিতে ছোট বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, আবাসিক এলাকার সৃষ্টি হচ্ছে, বিশ্বনাথেও আল-হেরা ও আল-বুরাকেরমত আধুনিক মার্কেট গড়ে উঠেছে প্রবাসীদের বিনিয়োগের ফলেই। তবে এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম। দেশের সাধারন মানুষের কল্যানের প্রবাসীদের আরো বেশি করে এগিয়ে আসা উচিত। আর সেই জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ মুখি পরিবেশ। কেউতো চাইবেনা তার টাকা নদীতে ফেলে দিক। বিনিয়োগের পরিবেশ নেই তাই তাদের কষ্টার্জিত টাকায় নির্মিত হচ্ছে আলিশান বাড়ী। সরকার প্রবাসীদেরকে বিনিয়োগ করার সুযোগ সুবিধা করে দিলে বিশ্বনাথ তথা সিলেটে গড়ে উঠবে ছোট বড় অনেক কলকারখানা।
বিশ্বনাথে এমনও গ্রাম আছে যে গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক কিন্তু গ্রামের প্রবাসীর বাড়ী দেখলে কেউ বুঝতে পারবেনা যে কোথায় আছে। প্রবাসীরা দেশে আসেন আবার চলেও যান। রেখেযান বিশাল সম্পত্তি। তবে রেখে যাওয়ার মত লোক পাননা। কারন এই উপজেলার বেশির ভাগই প্রবাসী, স্বপ্ন বিলাসী, সবাই প্রবাসের কাংঙ্গালী। এমনও শত শত পরিবার আছে যাদের দেশে বাড়ী-ঘর দেখার মত কেউ নেই। তাই বাধ্য হয়ে দখলের ভয়ে ভাড়া না দিয়ে পরবাসীদের মাসিক টাকার বিনিময়ে রেখে যান বাড়ীতে। প্রবাসীদের বাড়ীতে বিশাল বিশাল বেড রুম কিন্তু থাকার মানুষ নেই অথচ প্রবাসীর বাড়ীর পাশেই কলিম উদ্দিন, ছলিম উদ্দিনের কাঁচা ঘরে রোদ ঢুকে মেঘ পড়ে। একটা মাত্র থাকার ঘর আর মানুষ ৮/১০জন। মানুষের এই গাদাগাদি দেখে বিচিত্র এই পৃথিবীর প্রশংসা না করে পরা যায় না। কারন সবাই সুখি হলে কাজ করবে কে। দারিদ্রতা না থাকলে পৃথিবীতে মানুষের অহংকারে বসবাস করা যেত না।
বিশ্বনাথের প্রবাসীরা যে শুধু নিজেদের আখের গোছাচ্ছেন তা কিন্তু নয়। প্রবাসীরা যথাসাধ্য সাহায্য সহযোগিতা করছেন বলেই বিশ্বনাথের বেশির ভাগ জায়গায় এখন আর ছনের ঘর নেই। এমন একটি বাড়ী খুঁজে পাওয়া যাবেনা যে বাড়ীতে কেউনা কেউ প্রবাসী। প্রবাসীদের সার্বিক সাহায্য সহযোগিতায় গরীব আত্বীয়-স্বজনরা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছেন সামনের কাতারে। প্রবাসীরা গড়ে তুলেছেন ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে স্কুল কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।