ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশি প্রার্থী আট
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মার্চ ২০১৫ ইং, ১০:৩৩ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ৭০১ বার পঠিত
নিউজ ডেস্ক: বিশ্বের অন্যতম সেরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্রিটেনের লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ কোটি। স্থানীয়দের পাশাপাশি ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকার অভিবাসীরা দেশটিতে রেখে চলেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রের পাশাপাশি আধুনিক ব্রিটেনের রাজনীতিতেও এশীয় বংশোদ্ভূতরা রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
এর মধ্যে ভারতীয় ও পাকিস্তানিদের সঙ্গে বাংলাদেশিরাও আছেন ব্রিটিশ প্রশাসন ও রাজনীতির সামনের কাতারে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আনোয়ার চৌধুরী কয়েক বছর আগে ছিলেন ঢাকায় ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত।
আরেক বাংলাদেশি পলা মনজিলা উদ্দিন প্রথম মুসলমান হিসেবে ব্রিটিশ লর্ডসভার (হাউস অব লর্ডস) সদস্য হয়েছিলেন। জন্ম রাজশাহীতে হলেও তার স্বামী কমরউদ্দিনের বাড়ি সিলেটে। আনোয়ার চৌধুরীর পূর্বপুরুষের বাড়িও সিলেটে। আর প্রথম ব্রিটিশ-বাংলাদেশি মুসলিম এমপি রুশনারা আলী তো দেশটির প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির অন্যতম নীতিনির্ধারক। লেবার পার্টির ছায়া শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন তিনি। যদিও গত বছর পদটি ছেড়ে দিয়েছেন।
মূলত সত্তরের দশক থেকেই বাংলাদেশিদের ব্রিটেনে যাওয়া শুরু। বর্তমানে দেশটিতে ৫ লাখের মতো বাংলাদেশি বসবাস করছেন। তাদের বেশিরভাগের বাড়িই বৃহত্তর সিলেটে। রুশনারা আলীও জন্মগ্রহণ করেন সিলেটে।
আগামী ৭ মে অনুষ্ঠেয় ব্রিটেনের ৫৬তম সাধারণ (হাউস অব কমন্স) নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশিরা। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও তাদের কোয়ালিশন শরিক লিবারেল ডেমোক্রেট (লিব-ডেম) এবং প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির টিকিটে কমপক্ষে আট বাংলাদেশি নামছেন সরাসরি নির্বাচনী লড়াইয়ে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ছয় বাংলাদেশি মনোনয়ন পেয়েছেন লেবার পার্টির। মূলত লেবার পর্টির অভিবাসীবান্ধব নীতির কারণেই বাংলাদেশিসহ এশীয় ও আফ্রিকানদের বেশি সমর্থন এ দলটির প্রতি।
গতকাল ৩০ মার্চ ব্রিটেনে বর্তমান পার্লামেন্ট বিলুপ্ত হয়। আগামী ৯ এপ্রিল এবারের নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমাদান ও প্রত্যাহারের শেষ দিন। ৭ মে পার্লামেন্টের পাশাপাশি ইংল্যান্ডের বেশিরভাগ এলাকায় হবে স্থানীয় নির্বাচনও। মোট প্রায় সোয়া ৪ কোটি ভোটার এবারের সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেবেন। এবার পার্লামেন্ট নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে যে ছয় বাংলাদেশি মনোনয়ন পেয়েছেন তারা হলেন- রুশনারা আলী এমপি- বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বাউ আসন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক- হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড ফিলবার্ন আসন। টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে এই নির্বাচনী এলাকার রিজেন্টস পার্কের কাউন্সিলর। পূর্ব লন্ডনের বেথনাল অ্যান্ড বাউ আসনের পর টিউলিপের এ আসনটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাঙালি অধ্যুষিত। সেজন্য এই আসনে টিউলিপকে ঠেকাতে শেষ পর্যন্ত একজন বাংলাদেশিকেই প্রার্থী হিসেবে বেছে নিতে পারে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি। ৩৮ বছর বয়সী এই বাংলাদেশির নাম শাহীন আহমেদ, পেশায় মিনিক্যাব চালক। যদি তা-ই হয় তাহলে এবারের ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে বাংলাদেশি প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়াবে ৯-এ।
এ ছাড়া লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন কিংসটন ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার ড. রূপা আশা হক- ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকশন আসন। ড. রূপা হক একজন লেখক, কলামিস্ট এবং লেবার পার্টির কর্মী। লন্ডনের ইলিংবরার সাবেক ডেপুটি মেয়র তিনি।
এ ছাড়া উইলইন হ্যাটফিল্ড আসনে লেবার পার্টির মনোনীত বাংলাদেশি প্রার্থী আনোয়ার বাবুল মিয়া। একটি ব্রিটিশ বিনিয়োগ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তিনি। জন্ম সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। লেবার পার্টির আরেক বাংলাদেশি প্রার্থী ব্যারিস্টার মেরিনা আহমদ- বৃহত্তর লন্ডনের বেকেনহ্যাম আসন। অ্যামনেস্টি বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মেরিনা ৩০ বছর ধরে লেবার পার্টির সঙ্গে যুক্ত। পরিচালনা করেন বিভিন্ন শিশু সংগঠন।
এছাড়া লেবার পার্টির আরেক বাংলাদেশি প্রার্থী আলী আখলাকুল ইসলাম- লুটন আসন। সেই ষাটের দশকে তার পরিবার ব্রিটেনে বসবাস শুরু করে। আলী আখলাকুল কাজ করেছেন রেস্টুরেন্টে। ব্যবস্থাপনায় রয়েছে তার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি (রক্ষণশীল দল) থেকে এবার মাত্র একজন বাংলাদেশি মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি হচ্ছেন মিনা সাবেরা রহমান- বার্কিং আসন। সুনামগঞ্জের ছাতকে জন্মের ২১ দিনের মাথায় বাবা আলহাজ আবদুল গনি ও মা রাবেয়া বেগমের কোলে চড়ে সেই সত্তরের দশকে যান লন্ডনে। থাকেন বার্মিংহ্যামে। এ ছাড়া লিব-ডেম থেকে বাংলাদেশি প্রিন্স সাদিক চৌধুরী মনোনয়ন পেয়েছেন নর্দহ্যাম্পটন দক্ষিণ আসনে।
ব্রিটেনের এবারের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশি প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রুশনারা আলী। সিলেটের মেয়ে রুশনারা মাত্র ৭ বছর বয়সে পাড়ি জমান ব্রিটেনে। অক্সফোর্ডের সেই জনস কলেজে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করে যোগ দেন রাজনীতিতে। ১৯৯৭ থেকে ‘৯৯ পর্যন্ত বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বাউর এমপি ওনা কিংয়ের পার্লামেন্টারি সহকারী ছিলেন তিনি। ২০০০-২০০১ সালে ব্রিটিশ ফরেন অফিসে মানবাধিকার বিষয়ে কাজ করেন। বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বাউ আসনে ২০১০ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে প্রথম বাঙালি মুসলমান এমপি হন তিনি।