প্রেম নয়, প্রতিশোধ চাই
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ মার্চ ২০১৫ ইং, ১:৩২ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ৮৯৫ বার পঠিত
ডেস্ক: রোমান্টিক ছবি বলিউডকে চিরকালই ভালো ব্যবসা দিয়েছে। বলিউডও তাই ভালো-মন্দ, সব সময়ই রোমান্টিক ছবিকে আঁকড়ে ধরে থেকেছে। কিন্তু এহেন বলিউডের আকাশেও যেন এবার একটু অন্য মেঘ।
না, প্রেমের ছবির ব্যবসা পড়েছে এমনটা নয়। কিন্তু বলিউড যেন প্রেমের ছবি থেকে মুখ ফেরাচ্ছে অন্য দিকে। এমন এক দিকে, যেখানে আগেও তাকিয়েছিল বলিউড এবং তখেনা সেই ঘরানা বলিউডকে খালি হাতে ফেরায়নি। কিন্তু এবার যেন বলিউডের প্রেম একটু বেশিই চোখে পড়ার মতো।
কথা হচ্ছে ’রিভেঞ্জ ড্রামা’ বা ‘প্রতিশোধের গল্প’ নিয়ে তৈরি হওয়া ছবি নিয়ে। সুপারহিট ‘ডর’ ছবির কথা কে ভুলতে পেরেছে? পরবর্তীকালের সুপারস্টার, রোম্যান্টিক ছবির এক নম্বর নায়ক যে ছবির অ্যান্টিহিরো এবং সেখান থেকেই তার ক্যারিয়ারের উত্থান।
অনেকেরই আন্দাজ ছিল শাহরুখ-সানি-জুহি অভিনীত ‘ডর’-এর পর আরাে বেশ কিছু ‘রিভেঞ্জ ড্রামা’ দেখার সুযোগ পাবে বলিউড। কিন্তু সেই স্রোত আসতে আসতে লেগে গেল বেশ কয়েকটা বছর। অবশেষে পরপর এ ঘরানার ছবি দেখছেন বলিউডের দর্শকরা।
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘বদলাপুর’ দর্শকদের পছন্দ হয়েছে বলেই শোনা যাচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যেই মুক্তি পেতে চলেছে অানুস্কা শর্মা অভিনীত ‘এনএইচ ১০’। অনেকেই মনে করছেন, আগামী দিনে বলিউডে এ ধরনের ছবি আরো তৈরি হতে চলেছে।
তবে এসবের মধ্যে একজন অভিনেতার কথা আলাদা করে উল্লেখ না করলেই নয়। ‘ডর’ থেকে তত্কালীন উঠতি হিরো যেমন চিহ্নিত হয়েছিলেন ‘রিভেঞ্জ ড্রামা’ ঘরানার সফল অভিনেতা হিসেবে, ঠিক সেভাবেই এখনো এমন এক অভিনেতার জন্ম দেখছে বলিউড, যিনিও প্রায় অধিকাংশ ‘প্রতিশোধের গল্প’র কেন্দ্রে।
শাহরুখ খানের মতো রোমান্টিক নায়ক হয়ে ওঠার কোনো ইচ্ছা তার আছে কি না, সেই বিষয়ে নিজে কখনো আলোকপাত করেননি। কিন্তু ‘প্রতিশোধ’-এর গল্প নিয়ে যে পরিচালকরা কাজ করছেন তাদের একপেশে পছন্দ যে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী, তা এক প্রকার স্পষ্টই হয়ে গেছে। আগামী দিনে তিনি এ কৃতিত্ব নিয়ে কোথায় পৌঁছান, সেটাই দেখার।
প্রতিশোধের সালতামামি
১. বদলাপুর
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া এ ছবিটি ইতিমধ্যেই সমালোচক এবং ‘পপ্যুলিস্ট’ ছবির দর্শক- সবারই পছন্দ হয়েছে। অনেকেই বলেছেন, অবশ্যই দেখা উচিত এ ছবি। চকোলেট হিরোর ইমেজ নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা বরুণ ধাওয়ানের অভিনয়ও প্রশংসিত হয়েছে এ ছবিতে। ছবির গল্পের নায়ক রঘুর পরিবার ব্যাংক ডাকাতির সময় খুন হয়। রঘু কিভাবে নিজের কাছের মানুষের মৃত্যুর বদলা নেয়, তা নিয়েই এ ছবির গল্প।
২. হায়দার
‘রিভেঞ্জ ড্রামা’ ঘরানায় বলিউডের মুকুটে আরো একটি পালক। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ‘হ্যামলেট’-অনুপ্রাণিত কাহিনী নিয়ে বিশাল ভরদ্বাজের এ ছবি শাহিদ কাপুরের ক্যারিয়ারকে নতুন করে চাঙ্গা করে দিয়েছে। তাই নয়, মা এবং ছেলের সম্পর্কের অন্য রকম ডায়ানামিক্সকেও তুলে ধরেছে গল্পের মাধ্যমে। ‘রিভেঞ্জ ড্রামা’ গোত্রে নিঃসন্দেহে এটি বলিউডের অন্যতম সেরা প্রান্তিগুলোর একটি এবং ভরদ্বাজ তার স্বীকৃতিও কম পাননি।
৩. গজনি
কিছুটা ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালতি ‘মেমেনটো’ আর একই নামের দক্ষিণী ছবির মিশ্রণে বানানো গজনি এ ঘরানার অন্যতম সেরা নাম। গল্পের প্রোটাগনিস্টের প্রেমিকা খুন হয় আততায়ীর হাতে। দুর্বল স্মৃতিশক্তি নিয়ে নায়ক খুঁজে বের করে খুনিকে প্রেমিকার হত্যার বদলা নিতে। আমির খান অভিনীত এ ছবিটি বিশেষ ঘরানায় দাগ কেটে গেছে।
৪. অগ্নিপথ
অমিতাভ বচ্চনের ‘অগ্নিপথ’ ছবির রিমেক। ছবিতে হৃত্বিক রোশনের অভিনয় মুগ্ধ করেছিল দর্শকদের। এক শিক্ষককে খুন করে স্থানীয় গুণ্ডা। শিক্ষকের পরিবারকে বাধ্য করে ওই এলাকা ছেড়ে যেতে। শিক্ষকের কিশোর সন্তান পরে ফিরে আসে নিজের জন্মভূমিতে। নিজের অধিকার ফিরে পেতে। রিমেক হয়েও নতুন ‘অগ্নিপথ’ নিজের মতো করে সফল।
৫. কাহানি
সুজয় ঘোষ পরিচালিত এ ছবি গত কয়েক বছরের মধ্যে বলিউডের থ্রিলার ঘরানার বড় নাম এবং এটিও সেই ‘প্রতিশোধ’-এর গল্পই। মৃত স্বামীর হত্যার প্রতিশোধ নিতে কলকাতায় এসে পৌঁছায় স্ত্রী। পেঁয়াজের খোলার মতো করে রহস্যের পর্দা উন্মোচিত হতে থাকে। বিদ্যা বালান অভিনীত এ ছবি ব্লকবাস্টার হিটও হয়।
৬. গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর
২ পর্বের এ ছবিতে ধানবাদ এলাকার কয়লা রাজনীতি, ৩ পরিবারের সংঘর্ষ, ক্ষমতার আগ্রাসনের গল্প বলেন অনুরাদ কাশ্যপ। ২ পর্বের দ্বিতীয় ছবিটি বিরাট সফল হলেও প্রথম ছবিটি সেভাবে সফল হতে পারেনি। কিন্তু তারপরও ‘গ্যাংস সিরিজ’ বলিউডের এ ঘরানার অন্যতম মাইলস্টোন হিসেবেই চিহ্নিত।
অভিনেতা উবাচ
বরুণ ধাওয়ান : একজন অভিনেতার ক্ষেত্রে অনেক কিছু বের করে নিতে পারে এ ধরনের গল্প। প্রচুর পরিশ্রম করতে করতে। গভীরে গিয়ে ভাবতে হয়। প্রেমের গল্পে অভিনয় করা তুলনায় অনেক সহজ এ ধরনের ‘ডার্ক’ ছবিতে অভিনয়ের থেকে।
পরিচালক শ্রীরাম রাঘবন আমাকে ইগতপুরিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে কোনো টেলিভিশন নেই। আমরা বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। ২৫ দিন আমি একা ছিলাম। এটা এ ছবিতে অভিনয়ের ব্যাপারে আমাকে মারাত্মক সাহায্য করে। কারো সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না।
বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঝগড়া হতে থাকে। বেশির ভাগ মানুষই বুঝতে পারেন না, এটা আমায় করতে হচ্ছে অভিনয় করার জন্য। তবে সত্যি বলতে, যখন আমি ছবিটার শুটিং করছিলাম, বুঝতে পারিনি আমার সঙ্গে কী হচ্ছে। আমি ততদিনে অনেকটা পাল্টে গিয়েছি। এ ধরনের ছবিতে কাজ এটাই করে একজন অভিনেতার সঙ্গে।
নওয়াজ উদ্দিন সিদ্দিকী : আমার ১৮ বছরের পরিশ্রমের সুফল পেলাম। ২৫ বছর বয়সে আমি অভিনয় শুরু করি। মুম্বাই এসেছিলাম ১৫ বছর আগে। প্রথম ১০ বছরে হাতেগোনা কাজ পাই। ৪০ সেকেন্ডের চরিত্রে অভিনয় করা থেকে আজকের এ বড় চরিত্র- অনেকটা পথ এসেছি আমি। হয়তো অনেকতটা দেরি হয়েছে। কিন্তু আমি খুশি, আমার কাজ প্রশংসিত হয়েছে বলে। হঠাত্ এখন এ ‘প্রতিশোধ’-এর গল্প দর্শকদের পছন্দ হচ্ছে।
আমার বেশির ভাগ ছবিকেই ঘটনাচক্রে সমালোচকরা প্রশংসা করেছেন এবং দর্শকরাও পছন্দ করেছেন। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবেও দেখানো হয়েছে ছবিগুলো। এটা হলে নিজের ওপর দায়িত্ব বেড়ে যায়। আমি একজন অভিনেতা। ভুল আমার হতেই পারে। কিন্তু আমি এমনভাবেই ছবি বাছার চেষ্টা করি, যাতে সেই ভুলগুলো যত দূর সম্ভব এড়ানো যায়।