বিশ্বনাথে জাপার দুই গ্রুপের দন্ধ চরমে!
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মার্চ ২০১৫ ইং, ৮:০৭ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ১২০৫ বার পঠিত
মোহাম্মদ আলী শিপন:: কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির যুগ্ম-সম্পাদক, সিলেট ২ আসনের সাংসদ ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া ও সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবদুল্লাহ সিদ্দিকী বলয়ের বিশ্বনাথ জাতীয় পার্টির দুই গ্রুপের দন্ধ চরমে রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে।
সম্প্রতি জেলা জাতীয় পার্টির কমিটি গঠনের পর তাদের এই দন্ধ সৃষ্টি হয় বলে জানাযায়। এর ফলে বিশ্বনাথে জাতীয় পার্টি দুটি বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বনাথে এমপি এহিয়া গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক সিতাব আলী ও আবদুল্লাহ সিদ্দিকীর গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য আরশ আলী বাবলু এমটাই মনে করছেন জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীরা।
মহান স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা ও গত রোববার ছাত্র সমাজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপজেলায় উভয় গ্রুপ পৃথকভাবে পালন করে। বিশ্বনাথে জাতীয় পার্টির প্রতিপক্ষ এখন জাতীয় পার্টি। দুই গ্রুপের বিরোধ এখন তুঙ্গে। যতই সময় যাচ্ছে ততই এই দ্বন্ধ চরম আকার ধারণ করছে বলে জানাগেছে। ফলে এই দন্ধ রূপ নিতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষেও, এমনটাই আশংষ্কা করছেন বিশ্বনাথবাসী।
তবে ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া ও আবদুল্লাহ সিদ্দিকী তাদের কোনো বিরোধ নেই দাবি করলেও উপজেলা জাতীয় পার্টির স্থীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির গ্রুপিং এর সত্যতা এ প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেন।
জানাগেছে, বছরের পর বছর নিষ্ক্রিয়, নির্জীব থাকার পর অবশেষে জেগে ওঠার আভাস দিচ্ছিল বিশ্বনাথ উপজেলা জাতীয় পার্টি। সে লক্ষ্যে শুরু হয়েছে তাদের তোড়জোড়। দীর্ঘদিন আড়ালে আবডালে পড়ে থাকার পর সম্প্রতি তারা মাঠে বেরুতে শুরু করেছিল। জরুরী ভিত্তিতে উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করা হয়। এরপর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ উপজেলার প্রতিটি ওয়ার্ড জাতীয় পার্টির কমিটি গঠনের উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন। এ সবকিছুর সার্বিক দেখভালের দায়িত্ব পালন করছেন সিলেট-২ আসনের সাংসদ ও জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া।
১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সিলেট-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির মখসুদ ইবনে আজিজ লামা। কিন্তু এরপর আরও তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও সিলেট-২ আসনে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি জাতীয় পার্টির। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির প্রার্থীরাই এ আসনে বারবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া উপায় ছিল না জাতীয় পার্টির। এরই প্রেক্ষাপটে ধীরে ধীরে স্থবির হতে থাকে বিশ্বনাথ জাতীয় পার্টির কার্যক্রম। এক পর্যায়ে একেবারেই ‘হাওয়ায় মিলিয়ে যায়’ বিশ্বনাথ জাতীয় পার্টি! বিশ্বনাথের রাজনীতির মাঠে আ’লীগ-বিএনপি উত্তাপ ছড়িয়ে গেলেও জাতীয় পার্টির টিকটিকিরও দেখা মিলেনি। মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে বিশ্বনাথ জাতীয় পার্টির কোনোও অংশগ্রহণ দেখা যায়নি। দীর্ঘদিন দিন উপজেলা জাতীয় পার্টিকে রাজপথে দেখা না গেলেও বর্তমানে তাদের অবস্থান মাঠে। গত বছরের ২৪ মার্চ উপজেলা জাতীয় পার্টি কমিটি ভেঙে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। জাতীয় পার্টি বিশ্বনাথে রাজপথ দখলে নিতে চায়। সিলেট ২ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টি পেয়ে নেতাকর্মীরা এখন অনেকটা উজ্জীবিত। কিন্তু বর্তমানে জাতীয় পার্টি দুটি গ্রুপে রুপ নিয়েছে। ফলে জাতীয় পার্টিতে ভাঙ্গণের সুর উঠছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট সরকারের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে সিলেট-২ আসন (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর) জাতীয় পার্টি প্রার্থী মনোয়ন পেয়ে এ আসনে জয়লাভ করেন। গত পাঁচ বছর জাতীয় পার্টি উপজেলায় মাঠ ছাড়া ছিল। দীর্ঘদিন পর দলীয় সংসদ পেয়ে দলের নেতাকর্মীর মধ্যে প্রানঞ্জলতা ফিরে পায়।
এব্যাপারে উপজেলা জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক সিতাব আলী বলেন, জাতীয় পার্টি এখন আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। তবে দলের মধ্যে কিছু অসাধু লোক ভাঙ্গনের চেষ্টা করছে। আমাদের কোনো বিরোধ নেই।
জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য আরশ আলী বাবলু বলেন, জেলার জাতীয় পার্টির নির্দেশে উপজেলার সিনিয়র নেতাদের নিয়ে জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করছি। যারা এলাকায় আগে জাতীয় পার্টি করতেন তাদের খোঁজে-খুজে বের করে উপজেলায় জাতীয় পার্টিকে আরোও শক্তিশালী করার চেষ্টা করে আসছি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হোসাইন মো.এরশাদের রাজনীতিতে বিশ্বাসী বলে তিনি দাবী করেন। জাতীয় পার্টিতে বিরোধ নেই বলে অস্বীকার করেন তিনি।
সিলেট জেলা জাতীয় পার্টি আহবায়ক আবদুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, জেলার দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীর সাথে যোগাযোগ করে আসছেন। আগামি দিনে জেলায় জাতীয় পার্টিকে আরোও শক্তিশালী করাই তার মূল লক্ষ বলে তিনি জানান। এমপি’র সাথে তার কোনো বিরোধ নেই বলে দাবি করেন তিনি।
সিলেট-২ আসনের সাংসদ ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া জাতীয় পার্টিতে কোনো বিরোধ নেই দাবি করে বলেন, যারা বাসার সিটিং রুমে বসে প্রেস বিজ্ঞপ্তি মাধ্যমে জাতীয় পার্টি দাবি করে তাদের জাতীয় পার্টির কর্মী বলা যেতে পারে না। এরা কখনও জাতীয় পার্টির মঙ্গল চায় না। যারা দলের ভিতরে বিরোধ সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে তৃণমূল জাতীয় পার্টির মতামত নিয়ে দলীয় ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজপথে যাদের পাওয়া যাবে তাদের জাতীয় পার্টি নেতাকর্মী বলা হবে।