বিশ্বনাথে আ’লীগ ফুরফুরে, বিএনপিতে অনৈক্য, জাপায় দ্বন্ধ-জামায়াত উধাও
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ইং, ৯:৩৪ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ৮৬২ বার পঠিত
মোহাম্মদ আলী শিপন::বিশ্বনাথে রাজনীতির মাঠে অনেকটা ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার মতো দাপুটে অবস্থান নিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। তাদের প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াত রয়েছে মাঠ ছাড়া। দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিতে বিরাজ করছে অনৈক্য। চলমান আন্দোলনে তেমন কোনো তৎপরতা নেই তাদের মাঠে। অনৈক্যের কারণে বিচ্ছিন্নভাবে নেতাকর্মীরা আন্দোলন করার চেষ্টা করছেন। এদিকে,উপজেলা জাতীয় পার্টির কমিটি স্থগিত করার পর থেকে দলটি দেখা দিয়েছে দ্বন্ধ। অন্যদিকে,গ্রেফতার-মামলার আতংকে উধাও জামায়াত।
বর্তমানে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে মরিয়া হয়ে আওয়ামী লীগ। আওয়ামীলীগ বিশ্বনাথের রাজপথ দখলে নিতে থাকে। হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন করে দলটির নেতাকর্মীরা ফের চাঙ্গা হয়ে ওঠেন। বর্তমানে ‘বিএনপির আন্দোলনে কিছুই হবে না’ এই ধারণা কাজ করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মনে। এ সুযোগে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতারা। ফলে তারা রয়েছেন বেশ ফুরফুরে মেজাজে।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের দল। বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার আন্দোলনে কোনো জনসমর্থন নেই। আমরা রাজপথে,রাজপথে থাকব।
অন্যদিকে,চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রথমে উপজেলা বিএনপি মনোবল বেশ চাঙ্গা থাকলেও বর্তমানে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা হলেও হতাশা বিরাজ করছে। বিশেষ করে তৃণমূল নেতাকর্মীরা শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অনৈক্য, বিভেদ দেখে ক্ষুব্দ। তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করছেন, শীর্ষ নেতাদের অনৈক্যের কারণেই বিশ্বনাথ বিএনপি আন্দোলনের শুরুর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি। চলমান আন্দোলনে তাদের তেমন কোনো তৎপরতা উপজেলায় দেখা যায়নি। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হলে নেতারা ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তাদের মধ্যে অনৈক্য দেখা দিয়েছে। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল নিখোঁজ হন বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্বনাথ বিএনপিতে ছিল না কোনো দ্বন্দ, ক্ষোভ, ছিলনা কোনো বিভেদ। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা তখন ঐক্যবদ্ধভাবে সকল কর্মসূচী পালন করতেন। কিন্তু ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর বিশ্বনাথে বিএনপিতে অনৈক্য দেখা দেয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া বলেন, ‘বিএনপিতে অনৈক্য নেই, তবে বিএনপি বিশাল বড় দল হওয়ায় নেতাকর্মীর মধ্যে কিছুটা মতপ্রার্থক্য রয়েছে। বিএনপি রাজপথে আছে বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে, বছরের পর বছর নিষ্ক্রিয়, নির্জীব থাকার পর অবশেষে জেগে ওঠার আভাস দিচ্ছিল বিশ্বনাথ উপজেলা জাতীয় পার্টি। সে লক্ষ্যে শুরু হয়েছে তাদের তোড়জোড়। দীর্ঘদিন আড়ালে আবডালে পড়ে থাকার পর সম্প্রতি তারা মাঠে বেরুতে শুরু করেছিল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট সরকারের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে সিলেট ২ আসন (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর) জাতীয় পার্টি প্রার্থী মনোয়ন পেয়ে এ আসনে জয়লাভ করেন। দীর্ঘদিন পর দলীয় সংসদ পেয়ে দলের নেতাকর্মীর মধ্যে প্রানঞ্জলতা ফিরে পায়। কিন্তু বর্তমানে জাতীয় পার্টি দুটি গ্রুপের রুপ নিয়েছে। সম্প্রতি বিশ্বনাথ উপজেলা জাতীয় পার্টির কমিটি স্থগিত ঘোষনা করে জেলা জাপা। কমিটি স্থগিত করে জেলা আহবায়ক আবদুল্লাহ বলয়ের চার নেতাকে উপজেলা জাপার দায়িত্ব দেয়া হয়। এতে বাদ পড়েন এমপি এহিয়া বলয়ের নেতারা। এনিয়ে প্রকাশ্যে জাতীয় পার্টি দুটি গ্রুপের রুপ নেয়। উপজেলায় এমপি এহিয়া বলয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা জাপা নেতা সিতাব আলী ও আবদুল্লাহ সিদ্দিকীর বলয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাপা নেতা আরশ আলী বাবলু। গত ২ এপ্রিল উপজেলা জাপার কমিটি স্থগিতের প্রতিবাদে এহিয়া বলয়ের নেতারা ঝাড়– মিছিল বের করে। পরদিন জেলা জাপা কমিটি কে অভিনন্দন জানিয়ে আবদুল্লাহ বলয়ের নেতারা আনন্দ মিছিল বের করলে উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনায় এমপি এহিয়া বলয় প্রতিপক্ষ জাপার ৬০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করে। বুধবার ওই মামলায় আবদুল্লাহ বলয়ের ১৭ নেতাকর্মী জামিন নেন। দুই গ্রুপের বিরোধ এখন তুঙ্গে। যতই সময় যাচ্ছে ততই এই দ্বন্ধ চরম আকার ধারণ করছে বলে জানাগেছে।
সিলেট জেলা জাতীয় পার্টি আহবায়ক আবদুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, জেলার দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীর সাথে যোগাযোগ করে আসছেন। আগামি দিনে জেলায় জাতীয় পার্টিকে আরোও শক্তিশালী করাই তার মূল লক্ষ বলে তিনি জানান। এমপি’র সাথে তার কোনো বিরোধ নেই বলে দাবি করেন তিনি।
অপরদিকে, বিশ্বনাথে জামায়াত-শিবির যেন হাওয়ার সাথে মিশে গেছে। এক মাস ধরে তাদের কোনো তৎপরতা উপজেলায় লক্ষ করা যাচ্ছেনা। ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ-হরতালে প্রথমে তাদের শুধু ব্যানার টানিয়ে উপজেলা সদরের আশ-পাশ এলাকায় মিছিল সমাবেশ করতে দেখা যায়। এভাবে সপ্তাহ খানিক মাঠে তাদের দেখা গেলেও এরপর জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। যেখানে তাদের শরিক দল বিএনপি মাঠে নেই,তখন জামায়াত-শিবির তাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পালন করে আসছিল। ইতিমধ্যে উপজেলা জামায়াত-শিবিরের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েজন নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলা হাজতে প্রেরণ করেছে। বর্তমান তারা জেল হাজতে রয়েছেন। ফলে তাদের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোবল কিছুটা ভেঙে পড়েছে। গ্রেফতার ও মামলার আতংকে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে। ফলে এসব নেতাকর্মীর পরিবার পরিজন রয়েছেন বিপাকে।
এব্যাপারে উপজেলা জামায়াতের আমীরের আবদুল কাইয়ুমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।