বিশ্বনাথে বিলুপ্তির পথে গরু দিয়ে ধান মাড়াই
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ এপ্রিল ২০১৫ ইং, ৮:১০ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ১৫০৩ বার পঠিত
তজম্মুল আলী রাজু, মোহাম্মদ আলী শিপন:: কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে এক সময় ধান কাটা শেষে গরু দিয়ে মাড়াই দৃশ্য ছিল খুবই সাধারণ একটি বিষয়। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার সর্বত্রই দেখা যেতো গরু দিয়ে ধান মাড়াই’র ব্যবহার। কিন্তু কালের আবর্তে আর আধুনিকতার দাপটে সেই দৃশ্য এখন আর তেমন করে দেখা যায় না। গ্রামীণ বহুল ব্যবহৃত সেই গরু দিয়ে ধান মাড়াই আজ বিলুপ্তির পথে।
এদিকে, উপজেলায় চলিত বোরো মৌসুমের ধান কাটা শুরু হয়েছে। উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় এখনো কৃষকদেরকে গরুর সাহায্যে ধান মাড়াই দিতে দেখা যায়। শুক্রবার বিকেলে উপজেলার গোয়াহরি গ্রামের কৃষক চমক উল্লা গরু দিয়ে ধান মাড়াই করার দৃশ্য দেখা যায়।
চিরায়ত বাংলার হাজার বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্যের অন্যতম স্বাক্ষী হচ্ছে গরু দিয়ে ধান মাড়াই কাজ করার। একটাসময় এ উপকরণ ছাড়া ধান মাড়াইর চিন্তাই করতে পারতো না কৃষক-কৃষাণী। কিন্তু বর্তমান নিত্য-নতুন আবিষ্কারের যুগে ধান মাড়াইয়ের সহজ করতে আধুনিক সব যন্ত্রপাতি উদ্ভাবিত হওয়ায় দাপট হারিয়েছে গরু দিয়ে ধান মাড়াই। এমনকি এইসব যন্ত্রপাতির সাহায্য নিয়ে গরু দিয়ে মাড়াইয়ের যে রেওয়াজ ছিল, সেই রেওয়াজও এখন আর তেমন করে চোখে পড়ে না বিশ্বনাথে। গরুর ব্যবহার বিশ্বনাথের স্বল্প আয়ের কিছু সংখ্যক কৃষক পরিবারে কোনো রকমে টিকে থাকলেও সমাজের মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্ত শ্রেণীর কৃষক সমাজ এখন আধুনিক পাওয়ার বোমা মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই দিয়ে আসছেন। কিন্তু আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা বিশ্বনাথের কৃষকদের ভাষ্য হচ্ছে, বর্তমান সময়ে শ্রম ও সময়ের সাশ্রয় করতে আধুনিক যন্ত্রপাতির দিকে ধাবিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়েই তারা সনাতন যন্ত্রপাতি ছাড়ছেন বলেও জানান।
তবে উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় এখনো কৃষকদেরকে গরুর সাহায্যে ধান মাড়াই দিতে দেখা যায়। সেরকম কয়েকজন কৃষকের সাথে আলাপকালে জানা যায়, আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যয়বহুল হওয়ায় তাদের পক্ষে কেনা সম্ভবপর নয়। ফলে তারা সেই আদি গরু ব্যবহার করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে এবারের বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশী উৎপাদন হয়েছে এবং গত বছরের তুলনায় এবছর জমি আবাদও হয়েছে বেশী। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২৮০ হেক্টর, কিন্তু আবাদ হয়েছে ৭৩৬০ হেক্টর। তন্মদ্বে উচ্চ ফলনশীল (উপসী) বি-আর ৩ ধান ১৬০ হেক্টর, বিআর-১৪ ধান ১২০ হেক্টর, বিআর-১৯ ধান ৯৬ হেক্টর, ব্রি-ধান ২৮ করা হয়েছে ৪৪৪২ হেক্টর, ব্রি-ধান ২৯ হয়েছে ১৬৪১ হেক্টর, ব্রি-ধান ৩৬ হয়েছে ১৭ হেক্টর, ব্রি-ধান ৪৫ হয়েছে ১২ হেক্টর, ব্রি-ধান-৫০ হয়েছে ১০০ হেক্টর, হাইব্রীড হয়েছে ২৪০ হেক্টর, এরই মধ্যে এসএল ৮.এইচ ১৪৪ হেক্টর, হিরা ৪০ হেক্টর, জাগরন ১৬ হেক্টর, সম্পদ ২৫ হেক্টর, বাম্পার ২ হেক্টর, ময়না ৩ হেক্টর, দোয়েল ৬ হেক্টর, টিয়া ৪ হেক্টর, স্থানীয় জাতের টেপি বোরো ২৪০ হেক্টর, খৈয়া বেরো ১৬০ হেক্টর।
উপজেলার কারিকোনা গ্রামের রইছ আলী বলেন, এখন আর গরু দিয়ে ধান মাড়াই দেয়ার চাহিদা নেই। কৃষকরা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের দিকে হাঁটছেন। ফলে আমরাও বাধ্য হয়ে গরু বদলি বোমা মেশিন দিয়ে বোরো ধান মাড়াই দিচ্ছি।
গোয়াহরি গ্রামের কৃষক চমক উল্লা বলেন, বাবা-দাদার আমল থেকে দেখে আসছি গরু দিয়ে ধান মাড়াই দিতে। তাদের সেই ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য আমরা এখনও গরু দিয়ে ধান মাড়াই দিয়ে আসছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আখতার আহমদ বলেন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে উপজেলার বেশির ভাগ জায়গায় এখন আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কৃষিখাতে গরু দিয়ে ধান মাড়াই ব্যবহার বিলুপ্তির পথে রয়েছে।