স্বাগত বাংলা নববর্ষ ১৪২২
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ এপ্রিল ২০১৫ ইং, ১:২৪ পূর্বাহ্ণ | সংবাদটি ৯৯৯ বার পঠিত
নিউজ ডেস্ক :: চৈত্রের শেষ দিনেও প্রখর খরতাপে প্রকৃতিতে ভ্যাপসা গরম। চার দিকে খুন, গুম, রাহাজানি, হাহাকার, কষ্ট, নিপীড়ন এবং মানুষের প্রতিদিনকার জীবনে নেমে আসা অন্ধকারের ভেতর গত সন্ধ্যায় আরেকটি সূর্য অস্ত গেছে। আজ ভোরে দশ দিগন্তে আলোর ফোয়ারা ছড়িয়ে যে সূর্য উঠবে পুবাকাশে, সেই সূর্য নিয়ে আসুক নতুন আলোক বার্তা। সেই কামনায় স্বাগত আরো একটি নতুন বৈশাখ। শুভ নববর্ষ ১৪২২।
বাংলা নতুন বর্ষবরণের সময়ে তাপদাহে অস্থির নগরের মানুষ। তবু নতুন পোশাক, খাবারের পসরা সব খানে। পুরনো দিনের কষ্ট-গ্লানি মুছে যাক, ঘুচে যাক জ্বরা। সে আশা করে নববর্ষ বরণ করার জন্য দেশের মানুষ প্রস্তুত হলেও গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা খুবই নির্মম-নিষ্ঠুর। চার দিকে মানুষের বেদনা, না পাওয়ার কষ্ট আর হতাশা। তবুও নতুন দিনের প্রত্যয়ে চৈত্রসংক্রান্তির শেষ সন্ধ্যায় গতকাল থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন আয়োজন। পাহাড়ে শুরু হয়েছে নতুন বছর বরণের উৎসব।
ইলিশের পসরা থেকে এক টুকরো উঠবে বিত্তবানদের পাতে। বিত্তহীনরা তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে কিছু আয়ের চেষ্টা করছেন। রাজধানীর জনসমাগম বেশি হবে, এমন এলাকায় নেয়া তাদের ওই দোকান সাজানোর কাজ শেষ। কিছু জায়গায় আগের দিনেই বেশ সরগরম, আছে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের বেশ ভিড়।
অন্যবারের মতো এবারো নববর্ষের সবচেয়ে বড় আয়োজনটি করবে ছায়ানট। ভোর সোয়া ৬টায় রমনার বটমূলে শুরু হবে এই আয়োজন। এ আয়োজনে গাইবেন ছায়ানটের শিল্পীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। চারুকলার বকুলতলায় চলবে বিভিন্ন আয়োজন। রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন আয়োজনে মুখর থাকবে পুরো দিন।
শুকিয়ে যাওয়া মানুষের চোখের পানি। সীমান্তে হত্যা, রাজনৈতিক নিপীড়ন তার মধ্যে নগরে বসে আমরা উন্নয়ন অগ্রযাত্রার যে বয়ান পাই তাকে মেলাতে না পারলেও সামনের দিনগুলো উৎকণ্ঠামুক্ত হবে, সেই আশা করছেন সবাই। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাজনীতি অঙ্গন ঘিরে উৎকণ্ঠা সব মিলিয়ে দেশের অস্থিরতা নিয়ে কথা বলেছেন দেশ-বিদেশের অনেকে।
এরপরও কথা থাকে। সময় কারো অঙ্গুলি হেলনে চুপ থাকে না। ক্রান্তিকালেও নববর্ষের আমেজ সর্বত্র। যে ইলিশ নিয়ে এত কাড়াকাড়ি এবং বর্ষবরণের অনুষঙ্গ, সেই ইলিশ কি সামনে মিলবে? সে জিজ্ঞাসা থেকেই যাচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধ তো রয়েছেই, টিপাইমুখসহ আরো অনেক বাঁধ নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। দেশের নদীতে কমে যাচ্ছে মিঠা পানির প্রবাহ। ইলিশেরা উঠে আসছে নদী থেকে উপনদী, উপনদী থেকে খালে। তবুও মুক্তি মিলছে না তাদের। অন্য দিকে তিস্তা নদীতে পানি নেই। এক সময়ের খরস্রোতা নদী আজ ধু-ধু বালুচর।
বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল অনেক কিছুই। তার মধ্যে অস্থির রাজনৈতিক অঙ্গন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদসহ বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গুম, হত্যা, নারায়ণগঞ্জে সাত খুন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু, বছরের শেষে এসে জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর প্রভৃতি বিষয়গুলো ছিল আলোচনার শীর্ষে। ইন্তেকাল করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম। ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন লতিফ সিদ্দিকী।
এ ছাড়া বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশব্যাপী ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়, সুন্দরবনে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবি ছিল সারা বিশ্বের সচেতন মহলের আলোচনায়। সড়ক দুর্ঘটনা এবং লঞ্চডুবিতে শত শত মানুষের মৃত্যুর মিছিল নাড়া দিয়ে গেছে সবার অন্তরে। দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর সোনার খনি থেকে সোনা পাওয়া ছিল অব্যাহত। ধরা পড়েছে একের পর এক চালান। বছরের শেষে এসেও ছাত্রলীগের কোন্দলে খুন হয়েছে এক নেতা। ক্যাম্পাসগুলো সহাবস্থান ছিল না বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর।
মিডিয়ার রাজনীতি এবং সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে চলার একটি প্রবণতাও ছিল বছরজুড়েই। এ ছাড়া শেষ সময়ে এসে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ও প্রার্থীদের নিয়ে নানা ধরনের নাটকীয় পরিবর্তন ছিল মিডিয়ার আগ্রহের শীর্ষে।
নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন, এর বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান এবং সব আলোচনা-সমলোচনার মধ্যেও কঠোর হস্তে সব নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়েছে সরকার, এটি নিশ্চিতভাবেই বলা চলে। তবে বছরের শেষ দিকে জনগণের জন্য কিছুটা হলেও আনন্দের উপলক্ষ হয়ে আসে ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের টাইগারদের প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা।
গেল বছর অনেক জ্ঞানী-গুণীজন আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছে। এর মধ্যে ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের নাম উল্লেখ না করলেই নয়।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।