ইলিশের দাম এখনই আকাশ ছোঁয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ইং, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ | সংবাদটি ২৯৪০ বার পঠিত
নিউজ ডেক্স:: বাংলা নববর্ষের বাকি এখনও প্রায় দুই সপ্তাহ, কিন্তু বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে এখনই বরিশালের বাজারে ইলিশের মূল্য আকাশ ছুঁয়েছে। বড় সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি তিন হাজার টাকায়। নববর্ষের ভোরে পান্তা ভাতের সাথে এক পিস ইলিশ যে কোনো মূল্যে প্রত্যেকেই পেতে চাইছেন।
মানুষের এ ইচ্ছাকে পুঁজি করেই দালাল-ফড়িয়ারা ইলিশ মজুদ করতে দক্ষিণাঞ্চলের মোকামগুলোতে ছুটে এসেছেন। স্থানীয় পাইকার ও আড়তদাররাও মজুদ প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে নেই। সৌখিন ক্রেতারাও তাজা ইলিশের স্বাদ পেতে আগে-ভাগেই ছুটছেন ইলিশের পাইকারি বাজারে।
স্থানীয় মৎস্য মোকামের আড়তগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ইলিশের দাম বেড়েছে প্রতি মণ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতিদিনই এই দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। মঙ্গলবার পোর্ট রোডের মৎস্য আড়তগুলোতে সবচাইতে বড় সাইজের ১২’শ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায়। এক কেজির উপরের সাইজের ইলিশ হলেই প্রতি মণ লাখ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি সাইজের ইলিশ মণ প্রতি ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা, ৯’শ গ্রাম ওজনের প্রতি মণ ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা আর ৬’শ থেকে ৮’শ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে বড় সাইজের ইলিশ তেমন বেশি চোখে পড়েনি। ছোট সাইজের ইলিশের উপস্থিতিও কম। বাজারে আসা পাইকার ও মৎস্য শিকারীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে মেঘনা, তেঁতুলিয়া ও বঙ্গোপসাগর থেকে হাতেগোনা যে সব ট্রলার ইলিশ নিয়ে নগরীর পোর্টরোড ঘাটে আসছে তার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন পাইকার ও ব্যবসায়ীরা। এরা এখন মোকাম ঘুরে ঘুরে লাখ টাকা মূল্যের বড় সাইজের ইলিশ ক্রয় করে মজুদ করছেন। অনেক নামি-দামি মোকামে আবার ইলিশের হদিস না পেয়ে ঢাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা ফিরে গেছেন শহর-নগরের মৎস্য মোকামগুলোতে।
এদিকে ভোলার ঢালচর, চর কুকুরী মুকুরী, মনপুরা, শশীগঞ্জ ও দৌলতখানের মোকামে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। ভোলার সর্ব দক্ষিণের মৎস্য মোকাম ঢালচর পাতিলার ইলিশ ব্যবসায়ী চর কুকুরী মুকুরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন জানান, ঢাকা ও বরিশালের পাইকারি বাজার থেকে ইলিশের ব্যাপক চাহিদার কথা তাদের জানানো হলেও একটি ইলিশও সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এখানকার ইলিশ মোকাম ঘিরে শুধ্ইু হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। রসিকতার সুরে চরফ্যাশনের মৎস্য ব্যবসায়ী আলাল পাটোয়ারী ও লালমোহনের শাওন খান বলেন, স্থানীয় লোকজন বা এ পেশার সাথে জড়িতরাই নববর্ষে ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবেন। ওই দিন তারা চাষের মিনার কার্প অথবা হাইব্রিড কই মাছ দিয়েই পান্তা খাবেন।
বরিশালের মৎস্য মোকামেও চাহিদা মেটানোর জন্য ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি মনু দাস ও সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ সিকদার জানান, এ মোকামে ইলিশ মৌসুমে প্রতিদিন তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টন ইলিশ বিক্রি হয়। এখন এক’শ থেকে দেড়’শ টন ইলিশ সরবরাহ হচ্ছে। সর্বোচ্চ দু’শ টনের বেশি ইলিশ এখনও এ মোকামে বিক্রি হয়নি।
অন্যদিকে পাইকারি বাজারের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নগরীর খুচরা বাজারে ইলিশের মূল্য। এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ ক্রয় করতে ১২’শ থেকে ১৫’শ টাকা গুনতে হচ্ছে। তবে মাছের ওজন যদি দেড় কেজি হয়ে যায় তাহলে প্রতি কেজি দিতে হচ্ছে প্রায় তিন হাজার টাকা।
দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত মৎস্য বন্দর পাথরঘাটায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানেও বড় সাইজের ইলিশের আকাল চলছে। মূল্য নিয়েও বিশৃঙ্খলা চলছে। ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে যে যার ইচ্ছামত দাম রাখছেন। স্থানীয় পাইকাররা জানিয়েছেন, চৈত্র সংক্রান্তি পর্যন্ত ইলিশের মূল্য বাড়তেই থাকবে। তবে নববর্ষের দিন সকালে ইলিশের মূল্য আবার আকাশ থেকে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে পারে।