মহান মে দিবস আজ
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ মে ২০১৫ ইং, ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ | সংবাদটি ৬৭৭ বার পঠিত
ডেইলি বিশ্বনাথ ডেস্ক::আজ শুক্রবার মহান মে দিবস। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। আজ থেকে ১২৯ বছর আগে ১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওইদিন তাদের আত্মদানের মধ্যদিয়েই শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এ দিনটিকে তখন থেকেই সারা বিশ্বে মে দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী সরকারী ছুটি থাকে এ দিন। বাংলাদেশেও শুক্রবার সরকারী ছুটি। এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, সোনার বাংলা গড়ে তুলি’। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ এমপি এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, বর্তমান বিশ্ব পরিবর্তনশীল এবং তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে পরিবর্তনশীল বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উন্নত কর্মপরিবেশ, শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক, শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করাসহ বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই।বিশ্বের সকল মেহনতি মানুষকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, এ কথা অনস্বীকার্য যে, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলতে শিল্পোদ্যোক্তা, মালিক ও শ্রমিকের সম্মিলিত প্রয়াস একান্তভাবে কাম্য। সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সক্ষম হব বলেও তিনি বিশ্বাস করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, তাঁর সরকার বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকারখানা চালু করেছে। পোশাক শিল্পসহ ৩৮টি শিল্পখাতের শ্রমিকদের জন্য নি¤œতর মজুরি ঘোষণা করেছে। জাতীয় শিশু শ্রমনীতি ২০১০ এবং জাতীয় শ্রমনীতি ২০১২ প্রণয়ন করেছে।তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন বঞ্চিত, মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত, একদিকে শোষক, আরেকদিকে শোষিত- আমি শোষিতের পক্ষে’। তিনি পরিত্যক্ত কলকারখানা জাতীয়করণ করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে তাঁর সরকার দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তাঁর বাণীতে বলেছেন, বাংলাদেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র নির্বাসিত, গণতান্ত্রিক প্রথা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। কাজেই কোনো শ্রেণী- পেশার মানুষের অধিকারই আজ আর নিশ্চিত নয়। এই অবস্থার অবসানের জন্য সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অংশ নেয়ার জন্য এই মহান মে দিবসে আমি দেশের শ্রমজীবী ভাই- বোনদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।মে দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, একটি গণতান্ত্রিক সমাজ ছাড়া শ্রমজীবীসহ কোনো শ্রেণী-পেশার মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায় ও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। আর তাই সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন স্বাভাবিকভাবেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সাথে একাকার হয়ে যায়।বিএনপি নেত্রী বলেন, মহান মে দিবস উপলক্ষে আমি দেশ-বিদেশে কর্মরত সকল বাংলাদেশি শ্রমিক-কর্মচারী এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই এবং তাদের উত্তরোত্তর সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও সাফল্য কামনা করি। খালেদা জিয়া বলেন, আজকের এই দিনে রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনে শোচনীয়ভাবে নিহত ভাই-বোনদের কথাও আমি গভীর বেদনার সাথে স্মরণ করছি। মহান মে দিবস শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকভাবে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। আমরা বিস্মৃত হইনি যে, শ্রমজীবী মানুষের রক্তঝরা ঘামেই বিশ্ব সভ্যতার বিকাশ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হয়। তাদের অবদানের ফলেই বিশ্ব অর্থনীতি চাঙ্গা হয়।
অথচ গভীর পরিতাপের বিষয় আজও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নিপীড়িত শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির প্রতি সম্মান ও শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কে সব সময় ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায় এবং তা রক্ষায় আমরা আমাদের প্রতিশ্র“তি পালনে কখেনোই পিছপা হইনি।বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিজেকে সবসময় একজন শ্রমিক হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব ও স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, শ্রমিকদের দুই হাতকে তিনি (জিয়াউর রহমান) উন্নয়নের চাবিকাঠি ভাবতেন। এদেশের শ্রমজীবী ও পরিশ্রমী মানুষের কল্যাণে তিনি যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। আমাদের দলের পতাকায়ও তার স্বীকৃতি রয়েছে। বিএনপি নেত্রী আরো বলেন, আমরা এদেশের শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে সরকারে থাকাকালে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করেছি। শ্রম আইন সংস্কার ও আধুনিকীকরণ, বেতন ও মজুরী কমিশন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি নির্ধারণ, বাস্তবায়ন ও তাদের বোনাস প্রাপ্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের সন্তানদের চিকিৎসা ও তাদের লেখা পড়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও প্রয়োগ করেছি। খালেদা জিয়া বলেন, শ্রমজীবী মানুষের সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে আমাদের এই প্রচেষ্টা আগামীতেও অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। তাদের গণতান্ত্রিক ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, ন্যায্য মজুরি এবং স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ অর্জনসহ সকল ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় মসজিদে ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলমহান মে দিবস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘ইসলামে গৃহ শ্রমিকদের সুরক্ষা ও অধিকার’ শীর্ষক এক ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোঃ অহিদুল ইসলাম। ওয়াজ করেন ঢাকার মদিনাতুল উলুম কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুর রাজ্জাক।
মাহফিলে বক্তারা বলেন, ইসলামের বিধান শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদা সমুন্নত রক্ষায় এক অনন্য রক্ষাকবচ। ইসলামের অনুশাসন না মানার কারণে আজ ঢাকা শহরের গৃহ শ্রমিকরা নির্যাতিত হচ্ছে। অথচ ইসলামের বিধান হচ্ছে তোমরা যা খাবে ও পরবে, তোমাদের দাস-দাসীকে তা খেতে ও পরতে দিবে। ইসলামের এমন সুন্দর বিধান মেনে চললে গৃহ শ্রমিকরা আর নির্যাতিত হবে না।বক্তারা বলেন, ইসলামে শ্রমিকের ঘাম শুকানোর পূর্বে মজুরি প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে। অথচ মজুরির দাবিতে বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পে হর-হামেশা শ্রমিকদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। ইসলামের অনুশাসন মেনে শ্রমিকদের সময়মত ন্যায্য মজুরি প্রদান করলে গার্মেন্টস শিল্পে অসন্তোষ দূর হতে বাধ্য।মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক এস এম সালাহ উদ্দীন ও সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিনসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
ঐতিহাসিক ঘটনাসমৃদ্ধ মহান মে দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দুদিনব্যাপী (১ ও ৪ মে) কর্মসূচি গ্রহণ করছে। কর্মসূচীগুলোর মধ্যে রয়েছে মে দিবসের র্যালি, উদ্বোধন ও সাংস্কৃতিক অন্ষ্ঠুান, সেমিনার, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা এবং দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ।বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপিত মে দিবসের সকল কর্মসূচীর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। উদ্বেধনী অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সরাসরি সম্প্রচার করবে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে।তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে সকাল সাড়ে সাতটায় রাজউক এভিনিউস্থ শ্রম ভবনের সম্মুখ থেকে একটি র্যালি বের করা হবে। র্যালিটি দৈনিক বাংলা মোড় ও পল্টন হয়ে প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হবে। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক র্যালির নেতৃত্ব দিবেন।
মে দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে ৪ মে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সকাল ও বিকালে দু’টি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। সকালে জাতীয় স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কাউন্সিল শক্তিশালীকরণ: ভূমিকা, প্রতিবন্ধকতা ও ভবিষ্যত করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ও লেবার স্টাডিজ (বিলস) ও সেফটি এ্যান্ড রাইটস। বিকালে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের অধিকার সংরক্ষণে আইনী সুরক্ষা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারটির যৌথভাবে আয়োজন করবে কর্মজীবী নারী ও ওশি ফাউন্ডেশন।জাতীয় পর্যায়ে গৃহীত কর্মসূচীর আলোকে জেলা পর্যায়েও মহান মে দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে শ্রম ভবন, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক দ্বীপ ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লে-কার্ড দ্বারা সজ্জিত করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। দিবস উপলক্ষে জাতীয় শ্রমিক লীগ, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল, জাতীয় শ্রমিক জোট, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টি, সিপিবি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, জাসদ, গণফোরাম, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে শ্রমিক সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে।