কর্মীদের নতুন-লুনার পুরাতন!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুলাই ২০১৫ ইং, ৬:৪৯ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ৩৫১৫ বার পঠিত
মোহাম্মদ আলী শিপন :: ঈদের দিন বিকেল ৪টা। অন্যান্য ঈদের মতো বাড়িতে নেই উৎসবের আমেজ, শিশুদের কোলাহল। পরিবারের প্রিয় মানুষ বাড়িতে না থাকায় হারিয়েছে সবার হাসি-আনন্দ। সেই মানুষটি হলেন নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী। তিনি ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকা বনানী থেকে নিখোঁজ হন। আজও তাঁর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। প্রতি বছর ঈদের জামাত শেষে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইলিয়াস প্রেমিরা ছুটে আসতেন তাঁর গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথের রামধানায়। ঈদে প্রিয় নেতার সাক্ষাত না পেলে ঈদানন্দ বুঝি অপূর্ণই থেকে যেত। তাই হুমড়ি খেয়ে পড়তেন জন-সাধারণ। প্রিয় নেতাকে ঘিরে ভিড় জমাতেন ফটো শিকারি তরুনেরা। তিনিও সবাইকে সাদরে গ্রহণ করতেন। কুশল বিনিময়, কোলাকুলি ও আপ্যায়ন করাতেন নিজ হাতে। বিশ্বনাথবাসীর প্রিয় নেতা ইলিয়াস আলী ছাড়াই ছয়টি ঈদ করলেন তাঁর জন্ম স্থান বিশ্বনাথ উপজেলাবাসী। ঈদের দুইদিন পূর্বে ছেলে-মেয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরেন ইলিয়াসের সহধর্মিনী তাহসিনা রুশদীর লুনা। নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গ্রামের বাড়ি বিশ্বনাথের অলংকারি ইউনিয়নের রামধানায় তাঁর মা সূর্যবান বিবি ও পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ করেছেন ইলিয়াসের সহধর্মিনী তাহসিনা রুশদী লুনা, ছেলে আবরার ইলিয়াস, নাবিদ, মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল।
সরেজমিন ঈদের দিন বিকেলে ইলিয়াস আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের সদস্যের মধ্যে ঈদের কোন আনন্দ নেই। বাড়িতে উপচে পড়া নেতাকর্মী ও জনতার ভীড়। তাঁর নির্বাচনী এলাকা সিলেটের বিশ্বনাথ-বালগঞ্জ-ওসমানীনগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আসতে দেখা যায়। এসময় তারা ইলিয়াস আলীর বাড়িতে এসে তাঁর মা সূর্যবান বিবি ও স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনার সাথে সাক্ষাৎ করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পুরো বাড়িটি ছিল লোকে লোকারণ্য। দল বেঁধে মানুষ তাঁর বাড়িতে আসছেন। এতে বেশিরভাগ লোকজন ছিল বিএনপির ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও ইলিয়াস সর্মথনকারি। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা পুরাতন কাপড় পড়ে ইলিয়াস আলীর নির্মিত বৈঠক খানায় বিকেল ৪টায় এসে প্রবেশ করে। এরই মধ্যে পুরো বাড়িটি লোক লোকার্য হয়ে পড়ে। অনেকই বৈঠক খানার ভিতরে প্রবেশ না করতে পারায় ইলিয়াস আলীর স্ত্রী কে এক নজর দেখতে ও তাঁর কথা শুনতে বারান্দায়, দরজা ও জানালা দিয়ে উকি মারতে দেখা যায়। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী উপস্থিত লোকজনের সামনে প্রায় ঘন্টাখানিক কথা বলেন। বাড়ির ভিতরে ইলিয়াস আলীর বৈঠক খানায় দফায় দফায় প্রায় দুই শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীসহ এলাকাবাসীকে সাথে তাহসিনা রুশদী লুনা কথা বলতে দেখা যায়। বৈঠক খানার সামনে গিয়ে দেখা যায় অনেকই ভিতরে চেয়ারে বসে আছেন এবং বেশ কয়েক জন বৈঠক খানার ভিতরে জায়গা না থাকায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। বিকেল ৫টা আসরে নামাজ পড়তে ওই বৈঠক খানা থেকে বের হন লুনা। এসময় দলীয় নেতাকর্মীরা লুনার সঙ্গে ফটো তুলে আগ্রহী হয়ে উঠেন। বেশ কয়েক গ্রুপে লুনার সঙ্গে নেতাকর্মীরা ফটো তুলতে দেখা যায়।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে অপেক্ষায় কেটে গেছে ৩৯ মাস। কখন বাড়ি ফিরে আসবেন ইলিয়াস। ছোট মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল,ছেলে লাবিব ও আবরাবকে কোলে তুলে নিবেন। মা সূর্যবান বিবি ও স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা পথ চেয়ে আছেন এখনও। ইলিয়াস ফিরবেন নাকি ফিরবেন না। তিনি জীবিত না মৃত তাও জানে না কেউ। তবে নিখোঁজ ইলিয়াস আলীকে নিয়ে এখনও আশাবাদি তাঁর পরিবার।
এদিকে, ঈদের আনন্দ নেই নিখোঁজ ইলিয়াস আলী পরিবারের মতোই তাঁর গাড়ি চালক আনসার আলী এবং ইলিয়াসের সন্ধান দাবিতে বিশ্বনাথে মিছিল করতে গিয়ে নিহত মনোয়ার,জাকির ও সেলিমের পরিবারের। এই পাঁচ পরিবারের কান্না আজো থামেনি। মনোয়ার,সেলিম ও জাকিরকে ফিরে পাওয়ার আসা থাকলেও নিখোঁজ ইলিয়াস ও তাঁর গাড়ি চালক আনসার আলীকে ফিরে পাওয়ার আশায় পথ চেয়ে আছেন পরিবারের সদস্যরা এবং উপজেলাবাসি।
ইলিয়াসের পরিবারের মত আনসারের পরিবারের মধ্যে ঈদ আনন্দ ছিল না। পরিবারের একমাত্র উর্পাজনকারি স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী মুক্তা বেগম এখন নির্বাক হয়ে পড়েছেন। পরিবারের সদস্যরা আছেন কবে ফিরে আসবেন আনসার সেই অপেক্ষায়।
অপরদিকে, বিকেল ৫টায় ডেইলি বিশ্বনাথ ডটকম এর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী শিপনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতে মিলিত হন তাহসিনা রুদশি লুনা। এসময় লুনা ডেইলি বিশ্বনাথ ডটকম সম্পাদককে বলেন, সত্যিকার অর্থে আমাদের পরিবারে ঈদের কোন আমেজ নেই। শুধু নিয়ম পালন করতে আর বয়োবৃদ্ধ শ্বাশুড়ির সঙ্গে সময় কাটাতে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঈদে বাড়িতে আসা। এতদিন পেরিয়ে গেল আজো স্বামীর কোন সন্ধান পেলাম না। একে একে কেটে গেছে ছয়টি ঈদ। এ অপেক্ষার শেষ কবে হবে তা একমাত্র আল্লাহ জানেন বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস জনতার ইলিয়াস আলী আবারও জনতার মাঝে ফিরে আসবেন। দেশবাসীর কাছে ইলিয়াস আলীর জন্য দোয়া কামনা করেন।