নিজামীর ফাঁসি বহাল
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জানুয়ারি ২০১৬ ইং, ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ | সংবাদটি ৬৮৩ বার পঠিত
বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এই রায় দেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
এর আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ গত বছরের ৮ ডিসেম্বর নিজামীর আপিলের রায় ঘোষণার এই দিন ধার্য করেন। এই বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
এর আগে ৭ ডিসেম্বর নিজামীর আপিলের ওপর যুক্তি খণ্ডন শেষ করে দুই পক্ষ। প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষের দেয়া যুক্তি খণ্ডন করেন আসামিপক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। সঙ্গে ছিলেন এসএম শাহজাহান ও শিশির মনির। পরে আসামিপক্ষের যুক্তি খণ্ডনের জবাব দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এরপর রায়ের দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। এ দিন আদালতের কর্তৃক রায়ের দিন ধার্যের পর অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আশা করছি, ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ধারাবাহিকতায় বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে নিজামীরও মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একাত্তরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নিজামী আলবদরদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য সংগ্রাম পত্রিকায় একটি লেখা লেখেন। এতে স্পষ্ট হয়, ওই লেখার পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ডিসেম্বর বা তার কাছাকাছি সময়ে আলবদরদের হাতে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা প্রাণ হারিয়েছেন। নভেম্বরে তার ওই লেখা থেকে স্পষ্ট যে আলবদরদের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ ছিল।
অ্যাটর্নি জেনারেল আরো বলেন, আলবদর বাহিনী যখন গঠিত হয়, তখন নিজামী ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। আর ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে আলবদর বাহিনী গঠিত হয়।
অন্যদিকে নিজামীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, যে সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে, তাতে নিজামী নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে খালাস পাবেন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, একাত্তরের দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় নিজামীর কিছু বক্তব্য তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ বলতে চেয়েছে, নিজামী উসকানি দিয়েছেন। সে জন্য তিনি দোষী। কিন্তু আসামিপক্ষের যুক্তি ছিল, সংগ্রাম পত্রিকায় যত বক্তব্য ওই সময়ে নিজামী দিয়েছেন, সবই চারটি পৃথক অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল বিবেচনা করেছেন এবং রায়ে খালাস দিয়েছেন। ওই অভিযোগগুলোর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলও করেনি। তাই এগুলো বিবেচনায় আসবে না।
অপরাধ সংঘটনে পাকিস্তানি সেনাদের নিজামীর সহযোগিতার অভিযোগ প্রসঙ্গে খন্দকার মাহবুব বলেন, কোন অপরাধ সংঘটনে সহযোগিতা বা উসকানি দেয়া হচ্ছে, তা সুনির্দিষ্ট হতে হবে। যেসব ঘটনা রাষ্ট্রপক্ষ উল্লেখ করেছে সেগুলো পাকিস্তানি সেনারা করেছে। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য হলো, নিজামী সঙ্গে ছিলেন। এখানে প্রধান আসামি হচ্ছে পাকিস্তানি সেনা। যেখানে প্রধান আসামির বিচার হচ্ছে না, সেখানে সহযোগী হিসেবে বিচার কতটা সমীচীন? পাকিস্তানি সেনাদের ওপর নিজামীর নিয়ন্ত্রণই বা কতটা?
চার অভিযোগে ফাঁসি : ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে করা এক মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। ২০১২ সালের ২৮ মে ট্রাইব্যুনাল নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে। ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দিয়ে ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আনা ১৬ অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে চারটিতে ফাঁসি ও চারটিতে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলে, নিজামী ছিলেন জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি। ছাত্রসংঘই পরে আলবদর বাহিনীতে পরিণত হয়, আর গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীই মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মিলে বুদ্ধিজীবী নিধন চালায়। আলবদর বাহিনীর অপরাধ ও কৃতকর্মের দায়দায়িত্ব নেতা হিসেবে নিজামীর ওপর বর্তায়। ট্রাইব্যুনালের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন নিজামী। ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আপিলের শুনানি শুরু হয়। ১১ কার্যদিবস শুনানি শেষে ৮ ডিসেম্বর মামলার কার্যক্রম শেষ হয়।