আমি যখন হলুদ সাংবাদিকতার শিকার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মার্চ ২০১৭ ইং, ১:২৯ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ৩৫১২ বার পঠিত
তৃতীয়বারের মত নিজ উপজেলাতেই হলুদ সাংবাদিকতা বা তথ্যসন্ত্রাসের শিকার হলাম। হোক সেটা ব্যক্তিগতভাবে বা পারিবারিকভাবে। একজন ক্ষুদ্র সংবাদকর্মী হিসেবে যা অত্যন্ত অনভিপ্রেত আমার জন্যে। অপ্রত্যাশিত তো বটেই। এতে করে আমি মোটেও বিস্মিত নই, তবে রীতিমত উদ্বিগ্ন। উদ্বিগ্ন প্রিয় উপজেলার এতদিনের গর্ব আর ঐতিহ্যের ‘মহান সাংবাদিকতা’ নিয়ে।
আমি একেবারেই দুধে ধুয়া তুলসী পাতা নই। নই ভুলত্রুটিরও উর্ধ্বে। তাই বলে চরিত্রটা এতটাই হারাইনি যে, কাউকে পছন্দ না করার খেসারতে তার তৈরী সংবাদের নেতিবাচক রসদ হয়ে উঠবো। সাংবাদিকতার কর্মক্ষেত্রে অনেকের সাথে পথের ভিন্নতা, মতের ভিন্নতা থাকতেই পারে। থাকতে পারে মনের দুরত্বও। কিন্তু এটাতো একান্তই ব্যক্তিগত, না হয় ক্লাবগত বা সংগঠনগত। তথাপি, পরিচয় একটাই সকলেই আমরা তথ্য মজুর, মফস্বলের সংবাদকর্মী।
সেই পথের, মতের, মনের ভিন্নতার কারণে ব্যক্তি আক্রোশ চরিতার্থের হাতিয়ার হিসেবে সাংবাদিকতাকে ব্যবহার করাটা কি আদৌ সাংবাদিকতার নীতিনৈতিকতা বা বস্তুনিষ্ঠতার সংজ্ঞায় পড়ে? সত্য-মিথ্যার বাছবিচার না করে ইচ্ছেমত চমকপ্রদ শিরোনাম দিয়ে পাঠককে মিথ্যা গল্প জোর করে গেলানোর চেষ্টা করাটা কি সাংবাদিকতার বৈশিষ্ট্য? অব্যাহতভাবে সমাজের সম্মানিত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের কাউকে জড়িয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে সংবাদ প্রচারের নামই কি সাংবাদিকতা? জানতে মন চায়। জানতে পারি, এর নাম নাকি হলুদ সাংবাদিকতা।
উইকিপিডিয়া এটাকে সংজ্ঞায়িত করে বলছে, ‘হলুদ সাংবাদিকতা বলতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভিত্তিহীন রোমাঞ্চকর সংবাদ পরিবেশন বা উপস্থাপনকে বুঝায়। এ ধরণের সাংবাদিকতায় ভালমত গবেষণা বা খোঁজখবর না করেই দৃষ্টিগ্রাহী ও নজরকাড়া শিরোনাম দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। হলুদ সাংবাদিকতার মুল উদ্দেশ্য হল সাংবাদিকতার রীতিনীতি না মেনে যেভাবেই হোক পত্রিকার কাটতি বাড়ানো বা টেলিভিশন চ্যানেলের দর্শক সংখ্যা বাড়ানো। অর্থাৎ হলুদ সাংবাদিকতা মানেই ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন, দৃষ্টি আকর্ষণকারী শিরোনাম ব্যবহার করা, সাধারণ ঘটনাকে সাংঘাতিক ঘটনা বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা, কেলেংকারীর খবর গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা, অহেতুক চমক সৃষ্টি করা ইত্যাদি।’
ব্যক্তি আক্রোশ মেটাতে বা সামান্য আর্থিক সংশ্রবে লালায়িত হয়ে কাউকে হলুদ সাংবাদিকতার শিকারে পরিণত করার আগে একটুও কি চিন্তার অবকাশ হয় না, সেটা ব্যক্তি বিশেষ বা তার পরিবারের মানহানির পর্যায়ে পড়ছে কি না? দুইশ থেকে পাঁচশ টাকার বিনিময়ে অথবা কারো ফুটফরমায়েশে সংবাদের নামে কারো গায়ে মিথ্যা কালেমা লেপন করে সাময়িক লাভবান হওয়া যায়, কিন্তু ‘আদর্শবান সাংবাদিক” কি হওয়া যায়? কাউকে সামাজিকভাবে হেয় করার আগে নিজের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অবস্থান, নৈতিকতা, শিক্ষাদীক্ষা কিংবা সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টিও কি ভাবার জন্যে যথেষ্ট অবকাশ রাখে না? সখির বগলের গন্ধ শুঁকার আগে নিজের বগলে গন্ধ আছে কি না, জানাটা কি জরুরী নয়?
সৎ সাংবাদিকতা সত্যেরই আরাধনা করে। আর নৈতিকতা এ সাংবাদিকতাকে করে মহান। বস্তুনিষ্ঠতা যার শক্তিশালী উপকরণ। এগুলোকে বিসর্জন দিয়ে সাংবাদিকতা হয় না। যা হয় সেটা তথ্যসন্ত্রাস বৈ আর কিছু না। আর একজন তথ্যসন্ত্রাস সাংবাদিক হতে পারে না। হলুদাভ তথ্যসন্ত্রাসী দেশ ও জাতির জন্যে ভয়াবহ ক্ষতিকর।
আমি বিনয়ের সাথেই বলছি, ব্যক্তি আক্রোশে হোক, অর্থের বিনিময়ে হোক কিংবা কারো ফরমায়েশে হোক, সাংবাদিকতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ফায়দা লুটা কখনোই সুফল বয়ে আনবে না। বরং আখেরে ক্ষতিগ্রস্তই করবে। আমার প্রিয় উপজেলা হোক হলুদ সাংবাদিকতামুক্ত। এ উপজেলার সকল সম্মানিত সহকর্মী সাংবাদিকসহ সাধারণ জনগন যেন কখনোই তথাকথিত সাংবাদিকতার নামে তথ্যসন্ত্রাসের শিকার না হোন, সেটাই প্রত্যাশা।
লেখক: আব্বাস হোসেন ইমরান
সিনিয়র সদস্য, বিশ্বনাথ সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিইউজে)
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি দৈনিক ভোরের কাগজ।