স্বামীর নির্বাচনী এলাকায় নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী লুনার হ্যাটট্রিক!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ মার্চ ২০১৭ ইং, ৮:১৯ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ৯৮১৮ বার পঠিত
মোহাম্মদ আলী শিপন:: প্রথমবারের মতো সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন গত সোমবার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান,ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন নিখোঁজ বিএনপি নেতা,সিলেট ২ আসনের সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীর সহধর্মীনি তাহসিনা রুশদীর লুনার মনোনিত বিএনপির প্রার্থীরা। সিলেট-২ আসন বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ ওসমানীনগর নিয়ে গঠিত। এই তিনটি উপজেলা বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত। ফলে এই তিন উপজেলায় বিএনপির মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিজয়ী হন। ২০১৪ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত ৪র্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ইলিয়াসপত্নী লুনার মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। ওই দুই উপজেলা ও সর্বশেষ গত সোমবার ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়। বর্তমানে সিলেট ২ আসনের তিনটি উপজেলায় বিএনপির মনোনিত উপজেলা চেয়ারম্যান রয়েছেন। ফলে ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদি লুনা হ্যাটট্রিক করেছেন বলে মন্তব্য করেন অনেকেই। বর্তমানে তিন উপজেলায় বিএনপির নেতাকর্মীরা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। এ নির্বাচনে ইলিয়াস নিখোঁজ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন বলে এলাকাবাসী জানান।
জানাগেছে, বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ইলিয়াস আলী তার গাড়ি চালক আনসার আলী ২০১২ সালে ১৭ এপ্রিল রাতে রাজধানী ঢাকা নিখোঁজ হন। দীর্ঘদিন হলেও তাঁর কোনো সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর কেন্দ্রীয় বিএনপির আহবানে বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর উপজেলায় ইলিয়াস আলীর ইমেজ ধরে রাখতে মাঠে নামেন ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদি লুনা। স্বামীর অবর্তমানে দলের হাল ধরেন তিনি। সিলেট-২ আসনের প্রত্যন্ত অঞ্চল ছুটে বেড়ান। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর প্রথমে দলীয় প্রতিক ছাড়া উপজেলা নির্বাচন ও পরে ইউপি নির্বাচনে ইলিয়াসপত্নী লুনার মনোনিত প্রার্থীরা দলীয় প্রতিকে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন। তবে ইউপি নির্বাচনে তেমন সফলতা না পেলেও উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা চমক দেখান। গত ২০১৪ সালের প্রথম দিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিশ্বনাথ উপজেলায় বিএনপি মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সুহেল আহমদ চৌধুরী বিজয়ী হন। বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদাল মিয়া বিজয়ী হন। বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনের সময় ওসমানীনগর থানা ছিল। তখন ওই সময় ওসমানীনগরবাসি ওই নির্বাচনে ভোটপ্রয়োগ করেন। পরে ওসমানীনগরকে উপজেলা ঘোষনা করা হয়। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন ওসমানীনগরে উপজেলা পরিষদের তফসিল ঘোষনা করে। গত সোমবার ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনিত প্রার্থী মইনুল হক চৌধুরী বিজয়ী হন। ওই তিন উপজেলায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনায় ইলিয়াসপত্নী লুনা অংশগ্রহন করেন। তিনি নির্বাচনী প্রচারনায় তাঁর স্বামী নিখোঁজের বিষয়টি এলাকাবাসী কাছে তুলে ধরেন। আর ইলিয়াস নিখোঁজ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি ওই তিন উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীদের বিজয়ী নিশ্চিত করে।
তাহসিনা রুশদি লুনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিষ্ঠার। যার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি নিখোঁজ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক,সাবেক সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম ইলিয়াস আলীর সুযোগ্য সহধর্মিনী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হলের সাবেক এজি এস তাহসিনা রুশদি লুনা,স্বামী ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর বাংলাদেশ রাজনীতিতে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন তিনি। তাহসিনা রুশদি লুনা সিলেটের বিশ্বনাথের গৃহবধু। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর তিনি সিলেট জেলা বিএনপির সদস্য হন ও সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্ঠা হিসেবে নির্বাচিত হন।
তাহসিনা রুশদি লুনা ডেইলি বিশ্বনাথ ডটকমকে বলেন, আজ দীর্ঘদিন ধরে স্বামী ইলিয়াস নিখোঁজ রয়েছেন। কিন্তু আজো তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও চাকুরি ও সন্তানের লেখা-পড়ার কারণে স্বামীর নির্বাচনী এলাকায় আসা হয় কম। ইলিয়াস আলীর নিজ এলাকায় বিএনপি শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। ইলিয়াস আলীর ভালবাসার কারণে এলাকার অসংখ্য নেতাকর্মী নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। মাঝে মাঝে তাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে এবং তাদের প্রয়োজনে এলাকায় আসা হয়।
লুনা বলেন, বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে প্রতিটি ঘরে ঘরে ইলিয়াস আলী তার সৈনিক তৈরি করে রেখে গেছেন। তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের বিএনপির আর্দশে লালিত হওয়ার ট্রেনিং দিয়ে গেছেন। তার প্রমাণ সদ্য সমাপ্ত ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাচনে ধানের শীষ ভোট দিয়ে ওসমানীনগরবাসী ইলিয়াস নিখোঁজের জবাব দিয়েছেন। এরজন্য তিনি ওসমানীনগরবাসী প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ি চালক আনসার আলীকে ফিরে পাওয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া করার আহবান জানান।
বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া চেয়ারম্যান বলেন, সিলেটের কোটি মানুষের নেতা ইলিয়াস আলী। সরকার তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষানিত হয়ে তাকে গুম করে রেখেছে। ইলিয়াস আলীকে বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে মানুষ কতটুকু ভালবাসেন, তা বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাচনে ব্যালেটের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এতে দলের নেতাকর্মীরাও আনন্দিত। ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলাকা বিএনপি খাটি বলে তিনি দাবি করেন।