ইলিয়াস আলী পাঁচ বছরে পনের বছরের উন্নয়ন করেছিলেন—-তাহসিনা রুশদীর লুনা

নিজস্ব সংবাদদাতা:: বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্ঠা ও নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলীর সহধর্মিনী তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেছেন, জনগনের নেতা এম. ইলিয়াস আলীকে ১০ বছর আগে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থা গুম করেছে। কিন্তু তারা তা অস্বীকার করছে। তবে একদিন জনগন ইলিয়াস গুমের জবাব দিতে হবে সরকারকে। আর সে সময় সামনে অপেক্ষা করছে। কারণ দেশে ইলিয়াস আলীর মতো সাহসী নেতা কমই আছেন। তাই এখনো ইলিয়াস আলীর জন্য হাজারো নেতা প্রাণ দিতে প্রস্তুত। কারন ইলিয়াস আলী ৫ বছর ক্ষমতায় থেকে বিশ্বনাথ—বালাগঞ্জ—ওসমানীনগরে যে উন্নয়ন করেছেন কিন্তু গত ১৫ বছরেও তার অর্ধেক উন্নয়ন হয়নি। বিশ্বনাথের উন্নয়নকে ফিরিয়ে আনতে ইলিয়াস আলীকে সরকারের গুম নামক কারাগার থেকে মুক্ত করতে হবে এবং আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে ও তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের পর তাঁর সন্ধান দাবিতে বিশ্বনাথে আমাদের তিন ভাই শহীদ হয়েছিল। বিএনপির অসংখ্য নেতাকমী ও এলাকার কয়েক হাজার মানুষ একাধিক মামলার আসামি হয়েছিলেন। পুরুষ শুণ্য ছিল এলাকা। তারপরও এ এলাকার মানুষ তাদের প্রিয় নেতাকে ভুলে যায়নি।

বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে লুনা বলেন, বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝঁুড়িতে পরিনত করেছে বর্তমান সরকার। চিরস্থায়ী ক্ষমতায় থাকার কৌশলে তারা আজ গণতন্ত্রকে লুন্ঠিত করেছে। দেশকে দূণীর্তির দেশে পরিনত করেছে। এখন দেশে বিএনপি দল করলেই আসামি হতে হয়, গুম হতে হয়। দেশের জনগণ এই দূণীর্তি—দুঃশাসন, অপঃশাসনের প্রতিকার চায়। তাই দেশের গণতন্ত্রকে আমাদেরকেই পুণরুদ্ধার করতে হবে। এজন্য বিএনপির সকল নেতাকর্মিকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমে দূবার্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেছেন, ইলিয়াস নিখোঁজের ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। এই ১০ বছরে ইলিয়াসের কোন হদিস পাইনি, সরকারও কোন সহযোগীতা করেনি। তবে, দেশে আমার পরিবার একটি নতুন পরিচিতি পেয়েছে। সেটা হচ্ছে গুম পরিবার! ইলিয়াস নিখোঁজের পর সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল জায়গায় গিয়েছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। তারা কৌশলে বিএনপির আন্দোলনকে পন্ড করতে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলো। কারণ তারা চীররস্থায়ী ক্ষমতায় থাকাতে চায় আর দেশকে ধ্বংশ করতে চায়।

লুনা আরও বলেন, ১০ বছর আগে সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকেরাই জনগনের সাহসী ও সত্যবাদী নেতা এম ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে গুম করেছে। এটা আর্ন্তজাতিক সংস্থাও বলছে। বিভিন্ন সংস্থার হিসেব মতে ইলিয়াসসহ দেশের আরও ৭ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে আ’লীগ সরকার গুম করেছে। আন্তর্জাতিকসহ বিভিন্ন সংস্থা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ইলিয়াস গুমের রহস্য উন্মোচন করেছে, নামও প্রকাশ করেছে। যা এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও সরকার তা অস্বীকার করছে।

তবে, দীর্ঘ ১০বছর ধরে আমরা যেমন ইলিয়াস ফেরার অপেক্ষায়, তেমনি দেশের জনগনও ইলিয়াস গুমের বিচারের অপেক্ষায়। তারা সকল গুমের বিচার চায়। ইলিয়াসসহ সকল গুমের জবাব একদিন সরকারেকই দিতে হবে। সে দিন আর বেশি দেরি নয়। জবাব দেবার সে-দিন এসে গেছে।

তিনি মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে সিলেটের বিশ্বনাথে পৌর শহরের নতুন বাজার এলাকায় ‘বিএনপি সাবেক সাংগঠনিক এম. ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ী চালক আনছার আলীকে সরকারের গুম নামক কারাগারে ১০ বছর বন্দির’ প্রতিবাদে উপজেলা ও পৌর বিএনপি ও অঙ্গ—সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া এবং পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বশির আহমদের যৌথ পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপি সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন মিলন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি মোজাহিদ আলী, মখন মিয়া।

সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সহ—সভাপতি গৌছ আলী, যুগ্ম সম্পাদক সিরাজ মিয়া, পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাই, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সুরমান খান, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমান খালেদ, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক শামসুল ইসলাম, সদস্য সাইদুর রহমান রাজু, পৌর যুবদলের সদস্য সচিব শাহজাহান, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব দুলাল আহমদ, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক রাসেল আহমদ, সাদস্য সচিব ফাহিম আহমদ। সভার শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন উপজেলা বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ক্বারী লোকমান আহমদ ও শেষে দোয়া পরিচালনা করেন খাজাঞ্চী ইউনিয়ন বিএনপির মাওলানা আবুল বশর মো. ফারুক। অনুষ্ঠানে বিএনপি ও অঙ্গ—সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।