বিশ্বনাথ সরকারি কলেজে শিক্ষকদের কর্মবিরতি, বিপাকে শিক্ষার্থীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ইং, ৬:৩৯ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ৪০০ বার পঠিত
নিজস্ব সংবাদদাতা:: সিলেটের বিশ্বনাথের সরকারি কলেজের ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রভাষক শংকু রানী সরকারের নানা কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন কলেজের অধ্যক্ষসহ আরও ২৫জন প্রভাষক। কলেজের প্রভাষকবৃন্দ সোমবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করে আসছেন। যার ফলে শিক্ষার্থীরা পড়েছেন চরমে বিপাকে। গত দুই দিন ধরে কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা আসলেও সঠিকভাবে কলেজে ক্লাস না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে। এর কোনো সঠিক সুরাহা না হলে প্রভাষকরা তাদের কর্মবিরতি পালন অব্যাহত থাকবে বলে জানান। বিভিন্ন সময়ে প্রভাষক শংকু রানী সরকারের অশুভ আচরন, শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলা, শিক্ষকদের প্রাণনাশের হুমকি, বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে প্রবেশ ও কলেজে বসবাসের জন্য অধ্যক্ষের অস্থায়ী কার্যালয়ে তালা দিয়ে দখল করাসহ ওই প্রভাষকের নানা কর্মকান্ডে অতিষ্ট হয়ে এ কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন কলেজের প্রভাষকবৃন্দরা। এমন অভিযোগ এনে আজ মঙ্গলবার সিলেট অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক আঞ্চলিক পরিচালকের কাছে কলেজে প্রভাষকরা তাদের কর্মবিরতির বিষয়টি লিখিত ভাবে অবহিত করেছেন। এছাড়াও কলেজের সার্বিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার সহযোগীতা চেয়ে একই দফতর এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মানিক মিয়া লিখিত আবেদন করেছেন। কলেজের সকল প্রভাষকবৃন্দরা অঘোষিত লাগাতার কর্মবিরতির পালন করায় কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখায় চরম ব্যাঘাত দেখা দিয়েছে।
এমন খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী কলেজ ক্যাম্পাসে ছুটে যান, এসময় কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায় কিছু কিছু শিক্ষার্থী ক্লাস না করেও ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। কলেজে বেশির ভাগ প্রভাষক নেই। একটু পরই অধ্যক্ষের নেতৃত্বে কলেজের বেশ কয়েকজন প্রভাষক কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এরআগেই কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থী কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করে চলে গেছেন। এ যেন কলেজ ক্যাম্পাস শিক্ষর্থী শুণ্যতায় বিরাজ করছে।
এসময় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপ হলে তারা জানান, গত দুইদিন ধরে কলেজে আসলেও ক্লাস সঠিকভাবে হচ্ছেনা। ক্লাস না হওয়ায় বাড়িতে চলে যাচ্ছি আমরা। এভাবে আর কয়েকদিন থাকবে সেটা বলতে পারব না আমরা।
এভাবে গত দুইদিন ধরে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত কলেজে আসা যাওয়া করলেও তারা ক্লাস না করেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। এনিয়ে অভিভাবক আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে বলে জানাগেছে।
এবিষয়ে কলেজের কয়েকজন প্রভাষকের সঙ্গে আলাপ হলে তারা জানান, শংকু রানী সরকারের কাছে কলেজের সকল প্রভাষক জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন। তার অশুভ আচরণ, অকথ্যভাষায় গালি-গাজ, প্রভাষকদের মারধর এর কারণে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। এর কোনো সঠিক সুরাহা না হলে আমাদের কর্মবিরতী অব্যাহত থাকবে।
এব্যাপারে প্রভাষক শংকু রানী সরকার বলেন, আমি আ.লীগ পরিবারের সন্তান, সমর্থনকারী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ প্রভাষকরা জামায়াত ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এছাড়াও তারা দীর্ঘদিন ধরে কলেজের কোনো উন্নতি করতে পারেননি। গত তিন মাস পূর্বে একজন অধ্যক্ষ নিয়োগ পেয়ে ছিলেন। এই তিন মাসে নতুন অধ্যক্ষ প্রায় ১০/১২ লাখ টাকার কাজ করে কলেজের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। আমি সার্বিক প্রতিবাদ করায় তারা প্রায় একবছর ধরে আমার বেতনসহ সকল প্রকারের ভাতা বন্ধ করে রেখেছেন। ফলে আমার সন্তানদের বরণ পূষন ও বাসা ভাড়া নিয়ে মানুষিক ভাবে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছি। বর্তমানে আমি মানবতার জীবন-যাপন করছি। কলেজের বেতন পাওয়ার জন্য গত তিনদিন ধরে অনশন হিসেবে কলেজের একটি রুমে প্রবেশ করেছি।
বিশ্বনাথ সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মানিক মিয়া জানান, গত বছর ফেব্রুয়ারী মাসে প্রভাষক শংকু রানী সরকার কর্তৃক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশুভ আচরন, অনৈতিক কর্মকান্ড, ভূয়া আইনজীবি হিসেবে কোর্টে ধরা খাওয়া, সিলেটের পীরের বাজার এলাকায় তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মানববন্ধন করার অপরাধে অপসারন চেয়ে কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনও শুরু করে। এছাড়াও কলেজে র্দীঘ মেয়াদী অনুপস্থিতির কারনে একাডেমী কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি প্রভাষক শংকু রানী সরকারের বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়। মূলত এবিষয় নিয়েই কলেজের প্রভাষকদের সঙ্গে শংকু রানী সরকারের দ্বন্ধ চলমান রয়েছে। কলেজের প্রভাষকদের হুমকি দেয়ার অভিযোগ এনে থানায় লিখিত আবেদন দেয়া হয়েছে বলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জানান।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) রমা প্রসাদ চক্রবর্তি বলেন, প্রভাষকদের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি থানায় জিডি করে রাখা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহিনা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, অধ্যক্ষ শুধু লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। এবিষয়টি আমার কিছুই করার নেই। এ বিষয়টি দেখবেন তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।