বিশ্বনাথে দীর্ঘ ১৬ বছর পর জামায়াতের গণজমায়েত, মানুষের ঢল
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ অক্টোবর ২০২৪ ইং, ৮:২৭ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ৬১ বার পঠিত
শিপন আহমদ:: দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের কালো মেঘ দূর হওয়ার পর সিলেটের বিশ্বনাথে নতুন কওে জেগে উঠেছে জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী লীগের জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে টিকে থাকা দলের নেতাকর্মীরা দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। দলের শক্তির জানান দিতে আয়োজন করা হয় সীরাতুন্নবী (সঃ) মাহফিলের। রবিবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলা পরিষদ মাঠে উপজেলা-পৌর জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এ মাহফিলে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। সীরাতুন্নবী (সঃ) মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন বিশ্বনাথ উপজেলা জামায়াতের আমির নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
বিশ্বনাথ পৌর জামায়াতের সেক্রেটারী আবদুস সোবহানের পরিচালনায় মাহফিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিলেট জেলা দক্ষিণের আমীর অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা দক্ষিণ জামায়াতের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী হাফেজ নাজমুল ইসলাম, অফিস সেক্রেটারী আব্দুল কাইয়ুম।
সীরাতুন্নবী (সঃ) মাহফিলে প্রধান অতিথি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ কারা চালাবে, ছাত্ররা তার একটা গাইডলাইন আমাদেরকে দিয়েছে। আমার গ্রামের একটা কৃষক ভাইয়ের ছেলে, আমার গ্রামের একটা শ্রমিক ভাইয়ের ছেলে-যদি যোগ্যতার বলে চাকুরি পায়, তার কাছে এক টাকার ঘুষ দাবি করবে-এমন সরকার বাংলার মাটিতে আমরা বরদাশত করব না। কোনো ঘুষ বাংলাদেশে আর চলবে না। কোনো চাঁদাবাজি আর বাংলাদেশে চলবে না। চাঁদাবাজরা মানবতার দুশমন। চাঁদাবাজরা ইসলামের দুশমন। দুর্নীতিবাজরা দেশের দুশমন। এরা দেশদ্রোহী। এদের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখবো। আমরা আন্দোলন শেষ করি নাই। আগামীর সরকার কোন চাচা হন, আমরা দেখবো। রাজনীতিকে ব্যবসা বানিয়ে পকেট গরম করার কেউ আর বাংলার মসনদ পাবেন না। বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম আর বরদাশত করা হবে না। বাংলাদেশ চলবে ন্যায়ের ভিত্তিতে, ইনসাফের ভিত্তিতে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ওপার থেকে বুবু আপনি টেলিফোনে নসিহত দিচ্ছেন। দেশে চলে আসেন না। আমরা তো আপনাকে দেশে চাই। আপনি যে হাজার হাজার মানুষকে গুম করেছেন, আপনি যে আয়না ঘর তৈরি করেছেন, আপনাকে সেই আয়না ঘরে আমরা রাখবো। রিমান্ডে যেখানে ঝুলিয়ে হত্যা করেছেন, ওটাও আপনাকে দেখতে হবে। আর চূড়ান্তভাবে হয়তো আপনাকে ফাঁসিতেই ঝুলতে হবে।’
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ থেকে জাতিকে মুক্ত করেছে। দেশের ১৭ কোটি মানুষকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের জন্য একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার দেশটাকে নতুন করে গড়ার কাজ করছে। এই সরকারকে অকার্যকর করতে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। পতিত ফ্যাসিবাদী হাসিনা বিদেশের মাটিতে বসে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। দেশবাসী তার কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না। তিনি দলীয় স্বার্থের ঊর্ধে উঠে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান জানান।
এদিন দুপুর মধ্যেই থেকে সীরাতুন্নবী (সঃ) মাহফিলে যোগ দিতে উপজেলা পরিষদ মাঠে নেতাকর্মীরা ঘন্ড ঘন্ড মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে পরিষদ মাঠ নেতাকর্মীদের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে। আসর নামাজের আগেই পুরো মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি অসংখ্য সাধারণ মানুষকে সীরাতুন্নবী (সঃ) মাহফিলে অংশ নিতে দেখা গেছে।
সীরাতুন্নবী (সঃ) মাহফিলে আরো বক্তব্য দেন বিশ্বনাথ পৌর জামায়াতের আমীর মাস্টার ইমাদ উদ্দিন, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মতিউর রহমান, নায়েবে আমীর এইচএম আখতার ফারুক, উপজেলা জামায়াতের এসিট্যান্ট সেক্রেটারী আব্দুল মুকসিদ আক্তার, বায়তুল মাল সম্পাদক আশিকুর রহমান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন পৌর সভাপতি শাহিন আহমদ রাজু, উপজেলা ছাত্র শিবির উত্তরের সভাপতি মতিউর রহমান, পশ্চিমের সভাপতি আবু তাহিদ, পৌর শিবিরের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন প্রমুখ। এসময় উপজেলা, পৌর ও বিভিন্ন ইউনিয়নের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।