বিশ্বনাথ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ডাক্তার-এম্বুলেন্স চালক নেই ! চরম ভোগান্তিতে জনসাধারণ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ অক্টোবর ২০২৪ ইং, ৬:৩৯ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ৮১ বার পঠিত
জামাল মিয়া,বিশ্বনাথ:: মরমি কবি হাসন রাজার জন্মভুমি বিশ্বনাথের রামপাশা। তারই দৌহিত্র দেওয়ার তৈমুর রাজা চৌধুরী ছিলেন একজন মানবতার সেবক। তিনি ১৯৭৮সালে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী থাকাবস্থায় অবহেলিত জনগোষ্ঠির চিকিৎসা সেবার জন্য রামপাশা ইউনিয়নের কাদিপুর নামক স্থানে হাসপাতালটি প্রতিষ্টার উদ্যোগ গ্রহন করেন এবং ১৯৮৪সালে ৩১শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। ২০১৮সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাসপাতালটি ৫০শর্য্যায় উন্নীত করলে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল মুহিত উদ্ভোধন করেন। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এই অঞ্চলের মানুষ উপযুক্ত কোন স্বাস্থ্যসেবা পায়নি। হাসপাতালটি দীর্ঘ দিন নিজেই অসুস্থ অবস্থায় ছিল। দিনে হাসপাতালের ভেতরে গরু ছাগলের হাট এবং রাতে ভুতুড়ে অবস্থায় নেশাখোরদের আড্ডাখানা ছিল। সাধারণত সর্দি, কাশি, ডায়েরিয়া রোগে আক্রান্তরা হাসপাতালে আসতে রাজি হতনা। কেউ কেউ আসলেও হাসপাতালে কাউকে পাওয়া যেতনা। আয়া পিয়নদের আচরনে রোগীরা পালিয়ে যেতেন। ডাক্তাররা প্রাইভেট প্র্যাকটিস নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। হাসপাতালের রোগীদের খাবারের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়া হতো। মাঝে মধ্যে রোগীদের কিছু খাবার দিলেও সেই খাবার খেয়ে রোগীরা অসুস্থ হয়ে পড়তেন। ডেলিভারী, দন্ত, অপারেশন থিয়েটার বছরের পর বছর বন্ধ থাকত। ইচ্ছাকৃতভাবে আয়া-পিয়নরা চিকিৎসকদের পরামর্শ্যে প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠিয়ে দিতেন এবং মারামারি দূর্ঘটনায় আক্রান্ত রোগীদের না দেখেই সিলেট ওসমানীতে রেফার করতেন। এতে অনেক রোগী রাস্তায় মারা যাওয়ার নজিরও রয়েছে। সর্ববস্থায় হাসপাতালটি সেবার পরিবর্তে মানুষের চিকিৎসার নামে হয়রানী করা হতো। তখন অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরে হাসপাতালটির অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। ২০২৩ সালে এ হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা, দেলোয়ার হোসেন যোগদানের পর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছেিল। কিন্তু জনবল সংকটের কারনে তিনি দিবানিশি পরিশ্রম করে হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবার গুণগত মান বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন। ২০০৯সালে প্রাপ্ত এ্যাম্বুলেন্সটি পুরাতন হওয়ায় এবং চালক পেনশনে যাওয়ায় ১ বছর ধরে সেটিও বন্ধ রয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে এ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন। হাসপাতালে পরিচ্ছন্ন কর্মী না থাকায় হ্সাপাতালে দূর্গন্ধ, ময়লা আবর্জনায় বেড, বক্স, টয়লেটসহ আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে। ৩জন ডাক্তার, ৩জন মিডওয়াইফ, ২১জন নার্স, ৪০জন স্বাস্থ্যসহকারি, নেই কোনো পরিচ্ছন্ন কর্মী। অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শুন্য রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, হাসপাতালের হাসপাতালে ডাক্তার না থাকায় অনেক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়, সেবাও পাননা ষন্টার পর ঘন্টার পর লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হয় । উত্তর মিরেরচর গ্রামের আব্দুল আজিজ, আমতৈল গ্রামের সুনারা ও রহমান নগরের রফিকা বলেন, আমরা সকাল থেকে টিকেট কিনে লাইনে দাড়িয়ে আছি কিন্তু ডাক্তার নেই। হাসপাতালে ওষুধও নেই। আমরা অসহায়ের মতো আছি। আমরা সেবা পেতে চাই। আমরা সেবা না পেলে কোথায় যাবো।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা, দেলোয়ার হোসেন সুমন বলেন, আমি যোগদানের পর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মানউন্নয়নে প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু ৩১শয্যার হাসপাতালের জনবল ও যন্ত্রপাতি নিয়ে ৫১শয্যার হাসপাতালটিতে পরিচালনা করতে হচ্ছে। ডাক্তার না থাকার কারনে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বাঁধা প্রাপ্ত হতে হচ্ছে। আমি উর্ধতন কতৃপক্ষের নিকট দাবি করছি, জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তার এবং এ্যম্বুলেন্সসের ড্রাইভার দেওয়ার জন্য।
এ ব্যাপারে কথা হলে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনন্দা রায় বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা যদি আমার কাছে কোনো লিখিত দেন তাহলে আমি উর্ধতন কতৃপক্ষের কাছে পাঠাবো। আশা করি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।