হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স আছে, চালক নেই
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ অক্টোবর ২০২৪ ইং, ৫:০১ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ৬৬ বার পঠিত
শিপন আহমদ:: প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা। এ উপজেলার বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। কিন্তু এ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও এক বছর ধরে নেই কোনো চালক। এতে সময়মতো চিকিৎসাসেবা নিতে পারছেন না উপজেলার প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ। এ অবস্থায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে জরুরি চিকিৎসাসেবা নিতে এই উপজেলার মানুষকে ভরসা করতে হয় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস অন্য যানবাহনের ওপর। এতে বাড়তি ভাড়া ও চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে এ উপজেলার রোগীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সচালক প্রায় এক বছর আগে প্রনশনে চলে যান। এতে চালকশূন্য হয়ে অ্যাম্বুলেন্স পড়ে আছে। দীর্ঘ এক বছর অতিবাহিত হলেও এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন কোনো অ্যাম্বুলেন্সচালক পদায়ন না হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গ্যারেজে একটি পড়ে আছে। এতে অ্যাম্বুলেন্সের যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
মরমি কবি হাসন রাজার জন্মভুমি বিশ্বনাথের রামপাশা। তারই দৌহিত্র দেওয়ার তৈমুর রাজা চৌধুরী ছিলেন একজন মানবতার সেবক। তিনি ১৯৭৮সালে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী থাকাবস্থায় অবহেলিত জনগোষ্ঠির চিকিৎসা সেবার জন্য উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের কাদিপুর নামক স্থানে হাসপাতালটি প্রতিষ্টার উদ্যোগ গ্রহন করেন এবং ১৯৮৪ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। ২০১৮ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাসপাতালটি ৫০ শর্য্যায় উন্নীত করলে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল মুহিত উদ্ভোধন করেন। ২০২৩ সালে এ হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা, দেলোয়ার হোসেন যোগদানের পর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু জনবল সংকটের কারনে তিনি দিবানিশি পরিশ্রম করে হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবার গুণগত মান বৃদ্ধিও চেষ্টা করছেন। ২০০৯ সালে প্রাপ্ত এ্যাম্বুলেন্সটি পুরাতন হওয়ায় এবং চালক পেনশনে যাওয়ায় ১ বছর ধরে সেটিও বন্ধ রয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে এ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন। হাসপাতালে পরিচ্ছন্ন কর্মী না থাকায় দূর্গন্ধ, ময়লা আবর্জনায় বেড, বক্স, টয়লেটসহ আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে। ৩ জন ডাক্তার, ৩ জন মিডওয়াইফ, ২১ জন নার্স, ৪০জন স্বাস্থ্যসহকারি, নেই কোনো পরিচ্ছন্ন কর্মী। অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শুন্য রয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, হাসপাতালে ডাক্তার না থাকায় অনেক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়, সেবাও পাননা ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গুরুতর রোগীদের এখান থেকে স্থানান্তর করা হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। স্থানান্তরিত রোগীদের পরিবহনের জন্য স্বজনদের ছুটতে হয় প্রাইভেট গাড়ির কাছে আর সুযোগ বুঝে প্রাইভেট গাড়িগুলো সরকারি ভাড়ার তুলনায় অনেক বেশি অর্থ হাতিয়ে নেয়। বিপদে পড়ে বেশি টাকা দিয়েই উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়মিত রোগী পরিবহন করেন রোগীর স্বজনরা।
উপজেলার পালের চক গ্রামের আতিক মিয়া জানান, সপ্তাহখানেক আগে রাতে রোগী নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে যাই। রোগীর সমস্যা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু সিলেট শহরে যাওয়ার জন্য সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালক না থাকায় বেশি টাকায় প্রাইভেট একটি মাইক্রো নিয়ে আমাকে যেতে হয়। এতে টাকা বেশি লাগলেও মাইক্রো ম্যানেজ করতে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন সুমন বলেন, আমি যোগদানের পর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মানউন্নয়নে প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু ৩১ শয্যার হাসপাতালের জনবল ও যন্ত্রপাতি নিয়ে ৫১ শয্যার হাসপাতালটিতে পরিচালনা করতে হচ্ছে। ডাক্তার না থাকার কারনে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বাঁধা প্রাপ্ত হতে হচ্ছে। আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি করছি, জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তার এবং এ্যম্বুলেন্সসের চালক দেওয়ার জন্য।
এবিষয়ে কথা হলে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) সুনন্দা রায় বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা যদি আমার কাছে কোনো লিখিত দেন তাহলে আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবো। আশা করি দ্রæত এ সমস্যার সমাধান হবে।