আপনি জানেন কি কপিরাইট আইন কি এবং কেন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ইং, ২:৫৪ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ৯৬৮ বার পঠিত
তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক: অনেক কষ্ট করে একটি বই লিখে বাজারে ছাড়লেন। বইটি বাজারে বেশ ভালো ব্যবসা করছে। সবাই আপনার লিখা নিয়ে বেশ আলোচনাও করছে। কিন্তু হটাথ করে একদিন দেখলেন আপনার একই লিখা অন্য একটি নামে বা অন্য কোন বইয়ের নাম দিয়ে বাজারে ছারা হল। এখন কি করবেন আপনি?
নিশ্চয়ই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইবেন, কিন্তু কিভাবে? আপনার বইটি যখন বাজারে ছেরেছিলেন তখন কি কপিরাইট করেছিলেন? যদি না করে থাকেন তবে অনেক বড় ভুল করেছেন। এখন জানুন কপিরাইট কি এবং কেন এটি আপনার প্রয়োজন।
কপিরাইট কি?
কপিরাইট একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আইন। কপিরাইট দ্বারা লেখকর মেীলিক সৃষ্টিকর্মের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের একচ্ছত্র অধিকার প্রদান করা হয়।কপিরাইট মূলত “লেখকের তার মৌলিক রচনার জন্য স্বত্ব প্রদান এবং বিনা অনুমতিতে যে কোন ধরনের পৃন:মুদ্রণ, অনুবাদ বা অনুলিপি নিবৃত্ত ও নিয়ন্ত্রণ করা”।
সহজ কথায় বলতে গেলে, ধরুন আপনি একটি বই লিখলেন তো এখন আপনি যদি উক্ত বই এর জন্য একটি কপিরাইট করে নেন তবে পরবর্তীতে আপনার অনুমতি বা হস্তক্ষেপ ছারা কেউ আপনার লিখা বই এর কপি বাজারে ছাড়তে পারবে না। উল্লেখ্য আমি শুধু বই এর কথা দিয়ে বুঝিয়েছি। এটি বই এর বদলে আরও কিছু হতে পারে।
কপিরাইট আইন দ্বারা লেখক ও অন্যান্য মেীলিক কর্মের সৃষ্টিকর্ম সুরক্ষিত হয়। কপিরাইট আইনের সাহায্যে গ্রন্থাগার বা প্রকাশককে মুদ্রিত বই ইত্যাদির নিজ খরচে আইনে উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে এক বা একাধিক কপি সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট এক বা একাধিক গ্রন্থাগারে বিনামূল্যে প্রেরণ করতে হয়।
কপিরাইটের প্রয়োজনীয়তা:
বর্তমান যুগে আপনার কোন সৃষ্টির কপিরাইটের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কপিরাইটের অধিকারী লেখক, শিল্পীদের নানাবিধ সুবিধা ভোগ করার অধিকার দেয়া হয়।
যেমন:
লেখক নির্বিঘ্নে নতুন জ্ঞানের সন্ধান করেন। তার লেখা আইন দ্বারা সুরক্ষিত হওয়ার কারণে তিনি আরো নতুন সৃষ্টির জন্য পরিশ্রম করেন।
লেখক, শিল্পীগণ তাঁদের কাজের জন্য সম্মানী পান, যা তাদের কাজে প্রেরণা যোগায়।
লেখক, শিল্পীগোষ্ঠী তাদের সৃষ্টিকর্মের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন।
কপিরাইট আইন লেখক, শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষা করে এবং দেশের সরকারের এটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তাদের স্বাথরক্ষা করা।
তাঁদের সৃষ্টিকর্ম অবৈধভাবে কেউ পরিবর্তন, পুন:মুদ্রণ বা নিজনামে ছাপাতে না পারে সে নিশ্চয়তা প্রদান করা হয় ও আইনের দ্বারা নিশ্চিত করা হয়।
সমাজের উন্নতি সাধিত হয়, সৃজনশীল কাজের বিকাশ ঘটে।
আন্তর্জাতিক কপিরাইট আইন সকল দেশের জন্য সুফল এনেছে। অন্য দেশের সৃষ্টিকর্ম আরেক দেশে নিরাপত্তা পায়।
সাহিত্য ও শিল্পকর্মের আদান প্রদান ও বিনিময়ে অন্যদেশে যেমন তাদের রচনা ও শিল্পকর্মের চাহিদা সৃষ্টি হয়, তেমনি নিজ দেশে অন্যদেশের সাহিত্য ও শিল্পকর্মের আমদানি হয়।
বিভিন্ন দেশের কপিরাইট আইন কেমন:
ইংল্যান্ড: ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত পৃথিবীতে কপিরাইট আইনের কোন অস্তিত্ব ছিল না। ১৭০৯ সালে সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে কপিরাইট আইন পাশ হয়। উক্ত আইনে সাহিত্য, নাটক, সঙ্গীত, রেকর্ড, চলচ্চিত্র, বেতার বার্তা, টেলিভিশন, সাময়িক পত্রিকা, ম্যাপ, সুরকার, চিত্র্রকর্ম, আলোকচিত্র, অপ্রকাশিত রচনা ইত্যাদি কপিরাইট আইনের আওতাভূক্ত করা হয়।
আমেরিকা: ১৭৯০ সালে সর্বপ্রথম আমেরিকায় কপিরাইট আইন পাশ হয়। এই আইনে বই, ম্যাপ ও চার্ট অন্তভূক্ত হয়। অন্যদেশের প্রকাশনা অবাধে প্রকাশনা শুরু হলে প্রবল আপত্তির ফলে ১৮৯১ সালে ‘চেজ এ্যাক্ট’ নামের একটি আইন পাশ হয় যাতে বিদেশী লেখকদের কপিরাইট সুবিধা প্রদান করা হয়। ১৭৯০ এর আইন বহুবার সংশোধিত হয় এবং ১৯০৯ সালে নতুন সংশোধিত আইন পাশ হয়।
ভারত: ১৯১১ সালে ইংল্যান্ডের কপিরাইট আইন ভারতসহ ব্রিটিশ শাসিত সকল উপনিবেশে কার্যকর করা হয়। ১৯১৪ সালে এই আইন সংশোধিত হয় এবং স্বাধীনতা প্রাপ্তি পর্যন্ত কার্যকর থাকে। ১৯৫৭ সালে স্বাধীন ভারতে নতুন কপিরাইট আইন পাশ হয়।
বাংলাদেশ: “বাংলাদেশ কপিরাইট আইন ২০০০”। এই আইনটি ১৮ জুলাই, ২০০০ সালে পাশ হয় এবং বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত হয়। ইতোপূর্বে বাংলাদেশের “কপিরাইট আইন(১৯৭৪)” তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক জারিকৃত কপিরাইট আইন ১৯৬২ সনের সংশোধিত রূপে কার্যকর ছিল।
তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের জারিকৃত ১৯৬২ সনের কপিরাইট আইনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এক সংশোধনীর মাধ্যমে “বাংলাদেশ কপিরাইট আইন-১৯৭৪ “ হিসেবে প্রচলন করা হয় এবং ১৯৭৪ হতে ২০০০ সালের ১৭ জুলাই পর্যন্ত কার্যকর ছিল।
বাংলাদেশের কপিরাইট আইন নিয়ে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে নিচে দেওয়া লিংকে যেতে পারেন। এখানে বাংলাদেশ “কপিরাইট আইন ২০০০” নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।