ব্রিটেনে ১০ সিলেটীসহ বাংলাদেশি প্রার্থীরা কে কত ভোট পেলেন?
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ মে ২০১৫ ইং, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ | সংবাদটি ৯৩২ বার পঠিত
এদিকে, এবারই প্রথমবারের মতো সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি প্রার্থী যেমন মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তেমনি সর্বোচ্চ সিলেটিও এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। যার ফলে নির্বাচন নিয়ে গোটা বাংলাদেশের চাইতে সিলেটের মানুষের আগ্রহটা একটু বেশিই ছিল। এমনকি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর সিলেট নগরী, জেলা, উপজেলা, গ্রাম-গঞ্জে মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিলও হয়েছে।
জানা যায়, এবার ব্রিটেনের পার্লামেন্টে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সিলেটি প্রার্থী ছিলেন ১১ জন। তারা হচ্ছেন লেবার পার্টির রোশনারা আলী, ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল মিয়া, আমরান হোসাইন, ড. রূপা আশা হক, আলী আখলাকুল, ফয়ছল চৌধুরী, সুমন হক, লিবারেল ডেমোক্রেটস (লিবডেম) পার্টির আশুক আহমদ, প্রিন্স সাদিক আহমদ, মোহাম্মদ সুলতান ও কনজারভেটিভ পার্টির মিনা রহমান। তবে নির্বাচনের কিছুদিন আগে সিলেটের ছাতকের সুমন হকের প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যায়। মাত্রাতিরিক্ত মদ পান করে গাড়ি চালানোর অভিযোগে লেবার পার্টি তার প্রার্থীতা বাতিল করে। ফলে নির্বাচনে লড়েন ১০ জন সিলেটি।
এছাড়াও এবার নির্বাচনে সিলেটি ১০ জন প্রার্থীর বাইরে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীরা হচ্ছেন লেবার পার্টির প্রার্থী শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক এবং লিবডেম’র প্রার্থী নারায়ণগঞ্জের মেরিনা আহমদ।
২০১০ সালে লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির সাথে কোয়ালিশন সরকারের পর এবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসলো কনজারভেটিভ পার্টি। যুক্তরাজ্যের ৬৫০টি নির্বাচনী আসনের মধ্যে ৩৩১ টি আসনে জয়লাভ করে দলটি। অন্যদিকে আশা জাগিয়েও ব্যাপক ভরাডুবি হলো অভিবাসী বান্ধব দল লেবার পার্টির। তবে প্রথম বাঙালি বংশোদ্ভূত এমপি রোশনারা আলী পুনরায় জয়লাভের পাশাপাশি এবার আরো দুই বৃটিশ বাংলাদেশির আভিষেকের মাধ্যমে রচিত হয়েছে নতুন ইতিহাস। লন্ডনের বেথনালগ্রিন অ্যান্ড বো আসনে লেবার পার্টি থেকে পুনরায় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন রোশনারা আলী। কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী ম্যাট স্মিথকে ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে তিনি বিজয় অর্জন করেন। রোশনারার প্রাপ্ত ভোট ৩২ হাজার ২৮৭। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যাট স্মিথ পেয়েছেন ৮ হাজার ৭০ ভোট।
এদিকে লন্ডনের অন্যতম আলোচিত আসন হ্যামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন থেকে লেবার পার্টির হয়ে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর নাতনী টিউলিপ সিদ্দিক। কনজারভেটিভ পার্টির শক্তিশালী প্রার্থী সাইমন মার্কসকে ১ হাজার ১৩৮ ভোটে পরাজিত করেন টিউলিপ। তার প্রাপ্ত ভোট ২৩ হাজার ৯৭৭। আর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাইমন পান ২২ হাজার ৮৩৯ ভোট। অপরদিকে লন্ডনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ আসন ইলিং সেন্ট্রাল এবং একটন থেকে জয়লাভ করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ড. রূপা হক। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে তিনি ২৭৪ ভোটে পরাজিত করেন কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী এনজি ব্রে’কে। রূপার প্রাপ্ত ভোট ২২ হাজার ২। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এনজি পান ২১ হাজার ৭২৮ ভোট। সারাদেশে যখন কনজারভেটিভ পার্টির জয়জয়কার তখন এই তিন আসনেই ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ প্রার্থীকে হারিয়ে লেবার দলকে সিট উপহার দেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ৩ কৃতি নারী।
এদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ১২ বাংলাদেশির মধ্যে যারা পরাজিত হয়েছেন, তারাও আশা জাগানো ফলাফল অর্জন করেছেন।
তাদের মধ্য থেকে লেবার পার্টির হয়ে লন্ডনের বেকেনহান আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ব্যারিস্টার মেরিনা আহমদ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। তার প্রাপ্ত ভোট ৯ হাজার ৪৪৮। এই আসনে ২৭ হাজার ৯৫৫ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন কনজারভেটিভ পার্টির বব স্টেওয়ার্ট। ওয়েলউইন অ্যান্ড হাটফিল্ড আসনে লেবার পার্টির ব্যারিস্টার আনওয়ার বাবুল মিয়া ১৩ হাজার ১২৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। কনজারভেটিভ দলের কো-চেয়ার গ্রান্ট শ্যাপ এই আসনে ২৫ হাজার ২৮১ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। রিগেইট অ্যান্ড বানস্টেড আসনে লেবার পার্টির আলী আখলাকুল ৬ হাজার ৫৭৮ ভোট পেয়ে তৃর্তীয় স্থান অর্জন করেন। কনজারভেটিভ পার্টির ক্রিসপিন ব্লান্ট ২২ হাজার ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন।
নর্থ ইস্ট হ্যাম্পশায়ার আসনে লেবার পার্টির আমরান হোসাইন ৫ হাজার ২৯০ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। এই আসনে কনজারভেটিভ পার্টির রানিল জয়বর্ধনে ৩৫ হাজার ৫৭৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির একমাত্র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি প্রার্থী মিনা রহমান বার্কিং আসনে লেবার পার্টির সাবেক মন্ত্রী মার্গারেট হজের কাছে পরাজিত হয়েছেন। মিনা রহমান ৭ হাজার ১৯ ভোট পেয়ে এই আসনে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। আর মার্গারেট হজ ২৮ হাজার ৮২৬ ভোট পেয়ে পুনরায় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
লিবারেল ডেমোক্রেট প্রার্থী হিসেবে নর্দাম্পটন সাউথ আসনে প্রিন্স সাদিক চৌধুরী পান ১ হাজার ৬৭৩ ভোট। এই আসনে কনজারভেটিভ পার্টির ডেভিড ম্যাকেনটুশ ১৬ হাজার ১৬৩ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। লুটন সাউথ আসনে আশুক আহমদ এমবিই লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির হয়ে ৩ হাজার ১৮৩ ভোট পান। লেবার পার্টির গেবিন সুকার ১৮ হাজার ৬৬০ ভোট পেয়ে পুনরায় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ওয়েলস রাজ্যের আর্ফন আসনে কাউন্সিলার মুহাম্মদ সুলতান লিবারেল ডেমোক্রেট দলের হয়ে ৭১৮ ভোট পেয়ে পঞ্চম স্থান অর্জন করেন। এই আসনে ওয়েলস ন্যাশনাল পার্টি ‘প্লাইড কামরুর প্রার্থী হেউইল উইলিয়াম ১১ হাজার ৭৯০ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন।
এছাড়াও মাইনোরিটি দল থেকে দুজন বাঙালি প্রার্থীর মধ্যে নর্থ ওয়েস্টের রচডেল আসনে সাবেক কাউন্সিলর ফারুক আহমদ রচডেল ফাস্ট থেকে ১ হাজার ৫৩৫ ভোট পান। এই আসনে সাবেক এমপি সাইমন ডানসাক ২০ হাজার ৯৬১ ভোট পেয়ে পুনরায় এমপি নির্বাচিত হন এবং বেথনালগ্রিন অ্যান্ড বো আসনে কমিউনিটিস ইউনাইটেড পার্টি থেকে অপর বাঙালি মোহাম্মদ রওশন আলী পান ৩৫৬ ভোট। এই আসনে ৩২ হাজার ২৮৭ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন বাঙালি মেয়ে রোশনারা আলী।