ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘর উদ্বোধনের পরও অবহেলিত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ইং, ৫:০৮ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ২৪১৩ বার পঠিত
শিপন আহমদ,ওসমানীনগর:: সিলেটের ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘরটি উদ্বোধনের পর থেকে অযতেœ আর অবহেলায় পড়ে রয়েছে। ভবন নির্মান করার পর যাদুঘরটি উদ্বোধন করা হলেও আজ পর্যন্ত দর্শনার্থীদের দেখার জন্য এখানে কোনো সরঞ্জামাদী রাখা হয়নি। তাছাড়া পরিচর্যা করার জন্য স্থায়ী ভাবে কেয়ারটেকার নিয়োগ না দেয়ায় পুরো যাদুঘরটির ভিতর-বাহির একেবারেই অপরিচ্ছন্ন হয়ে গেছে। অপরিচ্ছনতার কারনে যাদুঘরের হল রুমে কোনো সংগঠনই অনুষ্টান করতে আগ্রহী হয়না। ভবনটিতে বিশাল লাইব্রেরী কক্ষ, কেয়ারটেকার কক্ষ, ওয়েটিং কক্ষ, ৫টি কক্ষসহ দর্শনার্থীদের জন্য পৃথক বাথরুম রয়েছে। তাছাড়া ভবনের সু-নিপুণ কারুকার্য যে কাউকে আকর্ষন করে। তবে যাদুঘরটি এক নজর দেখার জন্য দুর-দুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসলেও তাদেরকে নিরাশ হয়ে চলে যেতে হয় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে ১১ জানুয়ারী সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতার গ্রহণের পর ১৯৫২’র ৫ ভাষা সৈনিক ও ১৯৭১’র ৭ শহীদ বীরশ্রেষ্ঠের স্মৃতি রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করে। পরিকল্পনা মাফিক ২০০৭ সালে জুন মাস থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের অর্থায়নে মহান এই বীরেদের জন্ম ভূমিতে স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানীর পৈতৃক নিবাস সিলেটের ওসমানীনগরের দয়ামীর বাজার সংলগ্ন ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। ২০০৮ সালে ২২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে জাদুঘর ভবনের নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। ৮১ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা ব্যায়ে ৩ হাজার ৫শত ৩৫ বর্গফুটের ১ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ ২০০৯ সালে জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ১ বছর পর অর্থ্যাৎ ২০১০ সালের জুলাই মাসে ভবনটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।
ওসমানী স্মৃতি রক্ষায় ১৯৮৪ সালে তৎকালীন এরশাদ সরকার ওসমানীর পৈতৃক নিবাস দয়ামীরে ১টি কমেেপ্লক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ডায়াবেটিক সেন্টার, মাতৃমঙ্গলসহ ৫০ শয্যার হাসপাতাল, শিক্ষা ফাউন্ডেশন সহ লাইব্রেরী সমন্বয়ে কমপ্লেক্সটি নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। আর এজন্যই স্থানীয় বাসিন্দারা প্রায় ১ একর ভূমি সরকারের নামে কবালা করে দেন। ১৯৮৪ সালের ২৬ আগষ্ট তৎকালীন সরকারের উপ-আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসক (উপ-অঞ্চল-১৪) বিগ্রেডিয়ার এমজি রব্বানী কমপ্লেক্সটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ পুনরায় কমপ্লেক্সটির ভিত্তি প্রস্তরর স্থাপন করেন। সে সময় প্রশাসন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ৭ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ১টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। এর পর কমপ্লেক্সটি দীর্ঘদিনে আর চালু হয়নি। বিগত দিনের সরকাররা কমপ্লেক্সটি চালুর ব্যাপারে অঙ্গিকার করলেও বাস্তবে কেউ এগিয়ে আসেনি। এক সময় ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ভবনের সামনের খালি জায়গা পরিণত হয় গোচারন ভূমিতে।
এমন অবস্থায় ২০০৮ সালে জাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় আনন্দিত হন বঙ্গবীর ওসমানীর স্বজন, ভক্ত ও তার অনুসারীসহ সর্বাস্থরের লোকজন। অবশেষে ২ বছরে বেশি সময়ের ব্যাবধানে মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর স্মৃতি রক্ষার্থে “ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর” এর উদ্বোধন করা হয় ২০১২ সালের ২৮ নভেম্বর। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পশ্চিম প্রান্তে নির্মাণ করা হয়েছে এই ১তলা বিশিষ্ট ভবনটি। মহাসড়ক থেকে ভবনের সৌন্দর্য্য দেখে যে কেউ আকর্ষিত হলেও ভবনটির সামনের কোন অংশে ওসমানীর নাম চিহ্নটুকুও এখন পর্যন্ত লেখা হয়নি। ফলে বুঝার উপায় নেই যে মহান বীর, বাঙ্গালির সূর্য্য সন্তান ওসমানীর স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে এই যাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে । জাদুঘর সম্পর্কে লোকজনের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও চালু না হওয়ার কারণে সেখানে কেউ যেতে চান না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওসমানীর ভ্রাতৃ পুত্র টিটু ওসমানী বলেন, দেরীতে হলেও ওসমানীর নীজ গ্রামে ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘরটি তৈরী করে উদ্ভোধন করা হয়েছিল এটা নি:সন্দেহে সিলেট বাসীর জন্য আনন্দের বিষয় তবে সরকার আন্তরিক হলে এটা যে কোন সময় চালু করা সম্ভব।
সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মতিউর রহমান বলেন, ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘরটিতে এখন পরিচর্যার কাজ চলছে এটি দেখবাল করার জন্য স্থায়ী ভাবে একজন কেয়ারটেকার নিয়োগ দেয়া হবে। তিনি আশ্বাষ দিয়ে বলেন এলাকাবাসীর এতে হতাশ হওয়ার কোন কারন নেই অতি শিগগিরই এটি চালু করা হবে।