নিখোঁজ হলেও বেতন পান আনসার!
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ এপ্রিল ২০১৫ ইং, ১০:৫৯ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ১৬৭২ বার পঠিত
মোহাম্মদ আলী শিপন::সাত হাজার টাকায় বেতনে চাকরি করতেন ঢাকায় বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক,সাবেক সাংসদ ও সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর গাড়ির চালক হিসেবে। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বনানী থেকে এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হন। ইলিয়াস আলীর গাড়ির চালক ছিলেন আনসার আলী। গাড়িটি বনানী থেকে উদ্ধার হলেও ঘটনার পর থেকে ইলিয়াস আলীর সঙ্গে আনসার আলীও নিখোঁজ রয়েছেন। আনসার আলী সিলেটের বিশ্বনাথের খাজাঞ্চি ইউনিয়নের গমরাগুল গ্রামের মৃত ইছব আলীর পুত্র। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আনসার ছিলেন দ্বিতীয়। নিখোঁজের দীর্ঘ সাড়ে ৩৫ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো তাদের কোন সন্ধান মিলেনি। তবে ইলিয়াস আলীর গাড়ি চালক আনসার আলী নিখোঁজ হলেও বেতন পান তার পরিবার। ইলিয়াস আলীর পরিবার প্রতি মাসে আনসার আলীর মা ও স্ত্রীর কাছে তার বেতনের টাকা প্রেরণ করে আসছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া। তিনি বলেন, আনসার আলীর পরিবারের খোঁজ খবর সব সময় নেওয়া হচ্ছে।
জানাযায়, বিগত ২০ বছর ধরে ঢাকায় ইলিয়াস আলীর বাসাতেই আনসার আলী বসবাস করে আসছিলেন। সুযোগ পেলে ছুটে আসতেন গ্রামের বাড়িতে। আনসার আলী বাড়িতে আসলে ছোট মেয়ে চাঁদনি কে নিয়ে সময় কাটাতেন। ইলিয়াস আলীর সাথে আনসার আলীর পরিবারের আত্মীয়তার সর্ম্পক ছিল। তিনি ছিলেন ইলিয়াসের খুব বিশ্বস্ত। আনসারের উপার্জিত অর্থ দিয়েই চলত তাদের সংসার। আনসার আলীর যে রাতে নিখোঁজ হয়েছেন ওই রাত ১১টার দিকে পরিবারের সদস্যদের সাথে আনসার আলীর সর্বশেষ কথা হয়। রাতেই তার পরিবার জানতে পেরেছেন ইলিয়াস আলীর সাথে আনসার আলীও নিখোঁজ হয়েছেন। এরপর থেকে আনসারের পরিবারের ভর করে অন্ধকার। কি করবেন দিশেহারা হয়ে পড়েন তার পরিবারের সদস্যরা। সম্প্রতি একটি কিন্ডার গার্ডেনে শিক্ষকতার চাকুরি নিয়েছেন আনসার আলী স্ত্রী মুক্তা বেগম। বাড়ি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঐ স্কুলে প্রতিদিন পড়াতে যান তিনি। কখনো কখনো শিশু চাঁদনীকেও সাথে নিয়ে যান। মুক্তা বেগম ঐ স্কুলে শিক্ষকতার বিনিময়ে কিছু সম্মানি পান।
কিন্ত সব মিলিয়ে এইসব টাকা দিয়েই কোনো রকম চলছে নিখোঁজ আনসারের সংসার। ইলিয়াস আলীর মতো আনসার আলী নিখোঁজের পর তার মা নুরজাহান বেগমের কান্না এখন থামেনি। এখনও ছেলের অপেক্ষা পথ চেয়ে রয়েছেন। কবে আসবে তার আদরে ছেলে আনসার।
আনসার আলীর মা নুরজাহান বেগম জানান, ইলিয়াস আলী কে আনসার মনে প্রাণে ভালবাসতো, আর ইলিয়াস আলীও আনসারকে তার পরিবারের সদস্যের মতো দেখতেন, ¯েœহ করতেন।
তিনি বলেন, ‘আর কত অপেক্ষা ! মন তো মানছে না।’ কবে আসবে আনসার সেই অপেক্ষা পথ চেয়ে আছি।
আনসারের স্ত্রী মুক্তা বেগম ডেইলি বিশ্বনাথ ডটকম কে বলেন, আগের মতো বিএনপি নেতারা মাঝে মাঝে দুই-একজন ফোন করেন। তবে ইলিয়াস আলীর পরিবারের সাথে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। স্বামী নিখোঁজের পর থেকে ইলিয়াস আলীর পরিবার আমাদের খরচ করার জন্য টাকা দেন। কিন্তু এই টাকা দিয়ে কোনো মতে সংসার চলছে। বাধ্য হয়ে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা চাকরি নিয়েছি।
তিনি বলেন, ছোট মেয়ে চাঁদনি (৬) প্রতিদিন তার পিতাকে এনে দেওয়ার কথা বলে। শিশু কন্যা চাঁদনীকে কিছুতেই সান্তনা দিতে পারছেন না। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ইলিয়াস আলী ও আনসার আলী আবারও ফিরে আসবেন।
ইলিয়াসপতœী তাহসিনা রুশদি লুনা ডেইলি বিশ্বনাথ ডটকম কে বলেন, আনসার আলীর পরিবারের সাথে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। আনসারের পরিবারকে আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করে আসছি।